আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) কাপ্তান ইমরান খান। ফৌজদারি মালায় দণ্ডপ্রাপ্ত এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে গুঞ্জন। কেউ কেউ মনে করছেন, আপিলের রায়ে হেরে গেলে তিনি আর নির্বাচনে লড়াই করতে পারবেন না।
এমন বাস্তবতায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জুলফিকার আহমেদ ভুট্টো দ্য নিউজে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান তোশাখানা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় পিটিআই প্রধানের পদ আর ধরে রাখতে পারবেন না।’
গতকাল শনিবার (৫ আগস্ট) বিচারক রায়ের সময় বলেছিলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে পদের অপব্যবহার করেছেন ইমরান। রাষ্ট্রীয় সফরের সময় বিদেশিদের কাছ থেকে পাওয়া মূল্যবান রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রি করেছেন তিনি।
তোশাখানা হলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীন একটি বিভাগ, যা অন্যান্য সরকার প্রধান ও বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের শাসক ও সরকারি কর্মকর্তাদের দেওয়া উপহার সংরক্ষণ করে। তোশাখানার নিয়ম অনুসারে, উপহার ভেদে একটা নির্দিষ্ট অর্থ জমা দিয়ে প্রাপ্ত উপহার নিজের কাছে রাখা যায়।
এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনে করেন, দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় রাজনৈতিকভাবে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে থাকার সুযোগ নেই তার।
ইমরানের অনুপস্থিতিতে পিটিআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি দলের নেতৃত্ব দেবেন বলে জানিয়েছেন পিটিআইয়ের একজন মুখপাত্র। কুরেশি ইমরান খানের আস্থাভাজন হিসেবেও পরিচিত।
আইনি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ ঠেকাতে একের পর এক রায় দেওয়া হচ্ছে। অভিযুক্ত হওয়ায় সরকারি পদের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে এই সাবেক ক্রিকেটারকে।
তবে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত ও গ্রেফতার হওয়ার আগে সম্প্রতি বিবিসিকে বলেছিলেন, এই বছরের শেষ দিকে হতে যাওয়া নির্বাচন নিয়ে ‘প্রচণ্ড ভীত’ হয়ে পড়েছে সামরিক বাহিনী। তারা জানে, এই নির্বাচনে আমি জয়ী হবো।
আগের দিন বলেছিলেন, পাকিস্তানে ‘অঘোষিত সামরিক আইনে’ চলছে। ‘ফ্যাসিবাদীরা’ দেশটিকে অন্ধকার যুগের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
পাকিস্তানে রাজনীতিতে পর্দার আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ে দেশটির সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব হুমকিতে ফেলেছেন তিনি। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদে ক্ষমতায় বসা ইমরান খানকে গত বছর পার্লামেন্টে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করেন বিরোধীরা। গত মার্চেও আল কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে গিয়ে জামিন পান। তাকে গ্রেফতারের প্রতিরোধে দেশজুড়ে চলে ব্যাপক সহিংসতা।
এরপরই একের পর এক মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয় তাকে। জানা গেছে, ক্ষমতা হারানো পর রাষ্ট্রদ্রোহ, জ্বালাও-পোড়াওয়ে উসকানি এবং দুর্নীতির অভিযোগে দেড় শতাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
চলতি বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী আজম নাজির। তার মতে, নির্বাচন অন্তত চার মাস পেছানো হতে পারে।