ইরানের পাল্টা হামলার শঙ্কায় ‘সর্বোচ্চ প্রস্তুতি’ ইসরায়েলের

প্রকাশিত: ১০:১০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২, ২০২৪

ডেস্ক রিপোর্ট:

কয়েক মাস ধরে চলতে থাকা হামলা-পাল্টা হামলার মধ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় নতুন হামলার শঙ্কায় ‘সর্বোচ্চ প্রস্তুত’ অবস্থায় রয়েছে ইসরায়েল। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পক্ষ থেকে এখনও হামলার নির্দেশ আসেনি। তবে তাদের শীর্ষ কর্মকর্তারা একটি হামলা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। ইসরায়েলের গোয়েন্দাদের দাবি, ইরাক থেকে সম্ভাব্য ওই হামলা চালাতে পারে ইরান।

গতকাল শুক্রবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী সূত্রের বরাতে সিএনএন এ খবর জানায়। এতে বলা হয়, ইসরায়েল সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তবে এখনও তারা ইরানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ, এখনও দেশটির সর্বোচ্চ নেতার তরফ থেকে পাল্টা হামলার নির্দেশ আসেনি।
এর আগে ইরানের একটি উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানায়, ইসরায়েলের হামলার জবাবে তেহরান ‘সুনির্দিষ্ট ও বেদনাদায়ক’ পাল্টা হামলা চালাবে। এর কোনো সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানানো হয়নি। তবে তা ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণের আগে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানোর প্রস্তুতি হিসেবে এরই মধ্যে অত্যাধুনিক লেজার সিস্টেমের ব্যবহার শুরু করেছে ইসরায়েল। এ ‘আয়রন বিম’ লেজার সিস্টেম তৈরিতে ইসরায়েল খরচ করেছে ৫০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

গত এপ্রিলের শুরুতে সিরিয়ায় ইরানের একটি উপদূতাবাসে দেশটির শীর্ষ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদিসহ ছয় জনকে বিমান হামলায় হত্যা করে ইসরায়েল। পরে তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ারও হত্যাকাণ্ড ঘটে। এর জবাবে গত ১ অক্টোবর ইরান ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও প্রাণহানি ঘটেনি। ওই হামলার জবাব দিতে ২৬ অক্টোবর ভোররাতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুতের স্থাপনা ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েল। উত্তেজনা আবারও বাড়তে শুরু করে।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ইরানের দু’জন শীর্ষ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের উস্কানির বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। জেনারেল আলি ফাদাভি বলেছেন, ‘জায়নবাদীদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইরানের জবাব নিশ্চিত। গত ৪০ বছরে কোনো হামলাই জবাব ছাড়া যায়নি। আমরা জায়নবাদীদের যে কোনো কিছু ধ্বংসের ক্ষমতা রাখি।’ একইভাবে হামলার হুমকি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতার অফিসের প্রধান গোলামহোসেন মোহাম্মদি গোলপায়েগনি। তিনি বলেন, ইরান ধারালো ও দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

ইসরায়েলের হামলার জবাব দিতে ইরান প্রতিবেশী ইরাকের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে পারে। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুটি সূত্রের বরাতে অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগেই ইরানের পাল্টা হামলার শঙ্কা করছেন তারা। তাদের ধারণা, ইরাক থেকে বিপুল সংখ্যক ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হতে পারে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, কৌশলগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুর ওপর ইসরায়েল আরেকবার হামলা চালানোর সুযোগ পাক, সেটা এ মুহূর্তে তেহরান চাচ্ছে না।

গাজায় এক দিনে আরও ৫৫ জন নিহত
গাজায় শুক্রবার ইসরায়েলের হামলায় এক দিনে আরও ৫৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৮৬ জন। নিহতদের মধ্যে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে হামলায় ১০ জন রয়েছেন। গত ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় ৪৩ হাজার ২৫৯ জন নিহত ও ১ লাখ ১৮ হাজার ২৭ জন আহত হয়েছেন। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। শুক্রবার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, ফিলিস্তিনের বিশেষ র্যা পোর্টার ফ্রান্সিসকা আলবানিজ বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো ক্রমাগত গণহত্যার দায়ে জাতিসংঘের উচিত ইসরায়েলের সদস্য পদ বাতিল করা।