ইসকন নিষিদ্ধের কথা বলে সম্প্রীতি বিনষ্ট করার পাঁয়তারা হচ্ছে

প্রকাশিত: ৪:০২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৬, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘকে (ইসকন) নিষিদ্ধের কথা বলে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার পাঁয়তারা চলছে বলে মনে করে সম্মিলিত সনাতন পরিষদ।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের এমনটাই জানায় সংগঠনটি। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে সনাতন ধর্মালম্বীদের বাড়ি-ঘর, উপাসনালয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নি-সংযোগ ও লুটপাট এবং ইসকন সম্পর্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারের প্রতিবাদে সম্মিলিত সনাতন পরিষদের উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত সনাতন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জে কে পাল, অধ্যাপক অশোক তরু, প্রধান সমন্বয়ক শ্যামল রায়, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ আচার্য্য, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. মৃত্যুঞ্জয় কুমার রায়, মানিক চন্দ্র সরকার, অ্যাডভোকেট প্রহল্লাদ সাহা ও লায়ন চন্দন কুমার ঘোষ।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ১৯৪৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সনাতন সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর-মন্দির ভাঙচুর, সম্পদ লুণ্ঠন, হত্যা, গুম, খুন, ধর্ষণ, ধর্মান্তরিত ও ধর্মীয় অবমাননার নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। কিন্তু একটি ঘটনারও সঠিক বিচার পাওয়া যায়নি।

সংবাদ সম্মেলনে আয়োজক সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক শ্যামল রায় বলেন, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে সনাতন ধর্মালম্বীদের বাড়ি-ঘর, উপাসনালয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নি-সংযোগ ও লুটপাট চালানো হলেও সনাতনী সম্প্রদায় নিরাপত্তা ও বিচারের দাবিতে দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে থানা বা আদালতে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি।

প্রতিনিয়ত সনাতন সম্প্রদায়ের ব্যবসা ও সাধারণ মানুষের কাছে চাঁদা দাবি করা হয়েছে এবং হচ্ছে। দেশে আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি হওয়ায় সনাতনী সম্প্রদায় এখন দেশে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কোথাও কোথাও অভিযোগ এবং দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে বিচারের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম করলেও সরকার সনাতনী সম্প্রদায়ের জানমাল-সম্পদ ও নিরাপত্তায় তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায় নাই।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ আচার্য্য বলেন, সনাতনী সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব রক্ষায় ৮ দফা দাবি নিয়ে সনাতনী সম্প্রদায় ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করলেও দাবি আদায়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের দুর্গা পূজার একদিন ছুটি ব্যতীত তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় নাই। বরং হিন্দু নির্যাতনের চিত্র বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এলেও সরকার বা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঘটনাগুলোকে অস্বীকার এবং ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সরকার কোনো তদন্ত কমিশন এখনও গঠন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে নাই। যা অত্যন্ত দুঃখজনক, হতাশা, বৈষম্যমূলক ও বিমাতাস্বরূপ আচরণ বলে সনাতনীয় সম্প্রদায় মনে করে।

চট্টগ্রামের হাজারী গলির ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও গ্রেপ্তার নিরীহ ব্যক্তিদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়।

তারা আরও বলেন, কিছু ব্যক্তি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ও সেবামূলক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইসকনকে নিষিদ্ধ করার কথা বলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টসহ দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন। এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, মিথ্যা, ভুয়া তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী প্রভুসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীর মামলা করা হয়েছে, যাতে সনাতন সংখ্যালঘুদের ৮ দফা দাবির আন্দোলনকে দমন করা যায়। মামলাটি দ্রুত প্রত্যাহার করে গ্রেপ্তারদের জামিন দিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে থেকে।