ডেস্ক রিপোর্ট:
টানা ১২ দিন ধরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এতে উভয় পক্ষেই নিহতের সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে ১০ হাজারের বেশি। গতকাল মঙ্গলবারেই গাজার এক হাসপাতালে বিমান হামলায় অন্তত ৫০০ জন নিহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ হামলার জন্য ইসরায়েলি বাহিনীকে দায়ী করেছে। যদিও ইসরায়েল এ হামলার দায় অস্বীকার করেছে।
ইতোমধ্যে এ সংঘর্ষ নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। প্রশ্ন উঠেছে, এই সংঘাত কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে মোড় নেবে? হামাস কি যুদ্ধাপরাধী? মিসরই বা কেন মুসলমান প্রতিবেশীদের প্রবেশপথ বন্ধ করে রেখেছে?
এ যুদ্ধে না জড়ানোর জন্য ইতিমধ্যে ইরান ও হিজবুল্লাহকে হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বর্তমানে ইসরায়েলে সফরে আছেন। এর আগে তিনি হামাসকে নির্মূল করার কথা বলেছেন। সেইসঙ্গে ইসরায়েলকে সমর্থন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে না দেওয়া পর্যন্ত গাজায় অভিযান চলবে। তিনি বলেছেন, হামাসের প্রতিটি সদস্য এখন মৃত।
এ ছাড়া গাজায় সীমান্তে সেনা সমাবেশ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। দেশটি যেকোনো সময় গাজায় স্থল, আকাশ ও নৌ পথে হামলা শুরু করতে পারে। অতীতের যেকোনো অভিযানের চেয়ে ইসরায়েলের এ অভিযান জোরালো হবে।
ইরান সরাসরি যদি এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্র দেশগুলোও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে? এর ফলে কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হতে পারে?
এ নিয়ে বিবিসির আন্তর্জাতিক সম্পাদকজেরেমি বোয়েন যিনি ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চল থেকে রিপোর্টিং করছেন, তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে যখন জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, ইরান বা তার লেবাননি মিত্র হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর এই যুদ্ধে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, তার উত্তরে তিনি বারবার বলেছেন যে, তারা যেন কিছুতেই এর মধ্যে না ঢুকে।
ইরানকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকার কড়া বার্তা দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি দুটি যুদ্ধবিমান বহনকারী জাহাজ পাঠিয়েছে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, যদি কেউ এতে হস্তক্ষেপ করে, তাহলে তাদের শুধু ইসরায়েল নয়, মার্কিন সৈন্যদের মোকাবিলাও করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্রদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। অন্য অংশটির ওপর প্রভাব রয়েছে ইরান ও তাদের সমর্থক গোষ্ঠীর।
যুদ্ধের ঝুঁকি সম্পর্কে উভয় পক্ষই সচেতন। তারা এও জানে, স্নায়ু যুদ্ধ থেকে যদি তা সম্মুখ সমরে পরিণত হয়, তাহলে তা মধ্যপ্রাচ্যের সংঘর্ষকে আরও বড় করে তুলবে এবং সারা বিশ্বেই তার প্রভাব পড়বে।
ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিবিসির আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা লিজ ডুসেট বলেছেন, অতীতের যুদ্ধগুলোতে ইসরায়েল ‘হামাসকে কঠোরভাবে আঘাত করার’ অঙ্গীকার করেছিল, যাতে তাদের পক্ষে ইসরায়েলে রকেট নিক্ষেপের ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যায়। সেই সঙ্গে তাদের ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গগুলোও যাতে ধ্বংস হয়।
কিন্তু এবারের ব্যাপারটা অন্যরকম। ইসরায়েল ‘হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার’ অঙ্গীকার করছে এবং এমনভাবে তারা হামাসকে সমূলে উপড়িয়ে ফেলতে চায়, যেমনটা করা হয়েছির ইসলামিক স্টেটকে।
হামাসের অবকাঠামো ধ্বংস করা, সুড়ঙ্গ গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং তাদের কমান্ড ও কন্ট্রোল নেটওয়ার্ককে পঙ্গু করে দেওয়ার মতো সামরিক শক্তি ইসরায়েলের রয়েছে।
তবে গাজায় কী অপেক্ষা করছে সে সম্পর্কে ইসরায়েল কতটুকু জানে তা স্পষ্ট নয়। ইসরায়েলি নিরাপত্তা সম্পর্কে অভাবনীয় রকম নিখুঁত তথ্য, যা দিয়ে তারা ইসরায়েলের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দিতে পেরেছে, হামাসের সেই সামরিক শক্তি ইসরায়েলিদের হতচকিত করে দিয়েছে। হামাসও সম্ভবত একইরকম ভাবে প্রস্তুত কারণ তারা ভাল করেই জানে যে ইসরায়েলের দিক থেকে কী হিংস্র প্রতি আক্রমণ হবে।