
নিজেস্ব প্রতিবেদক:
ধর্ষণের আরবি প্রতিশব্দ ‘ইগতিসাব’। অর্থ ছিনিয়ে নেওয়া। পরিভাষায় ধর্ষণ বলা হয়, অনিচ্ছায়, জোরপূর্বক ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে যৌন চাহিদা পূরণ করা।
প্রতিটি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক এক হুমকি ধর্ষণ। জঘন্য এই অপরাধ দমন করা না গেলে সমাজের শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতি মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়, বিশেষত নারীর জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। ইসলামী আইনে ধর্ষণের শাস্তি অত্যন্ত কঠোর। ইসলামী আইনে ধর্ষণের শাস্তি অপরিহার্য।
ইসলামী আইনে ধর্ষণ একটি বহু মাত্রিক অপরাধ। যার মধ্যে কমপক্ষে তিনটি অপরাধ সংঘটিত হয়। তাহলো : ক. ব্যভিচার, খ. বল প্রয়োগ ও ভীতি প্রদর্শন, গ. সম্ভ্রম লুণ্ঠন।
ইসলামী আইনে এই তিনটি বিষয়ই পৃথকভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর ধর্ষণে যেহেতু এই তিনটি অপরাধের সমন্বয় ঘটে, তাই ধর্ষণ একটি গুরুতর অপরাধ।
ইসলামী আইনে ধর্ষকের শাস্তি কী হবে তা নির্ভর করে তার অপরাধের মাত্রা ও স্তরের ওপর। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো—
১. ব্যভিচারের শাস্তি : বেশির ভাগ আলেম বলেন, ধর্ষক যদি প্রাণঘাতী অস্ত্রের মাধ্যমে ভয়ভীতি প্রদর্শন না করে শুধু বল প্রয়োগ করে, তবে সে ব্যভিচারের শাস্তি ভোগ করবে। ইসলামী আইনে ব্যচিভারের শাস্তি হলো—ক. ব্যভিচারে লিপ্ত ব্যক্তি অবিবাহিত হলে এক শ কশাঘাত।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী—তাদের প্রত্যেককে এক শ কশাঘাত করবে। আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদের প্রভাবিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হও; মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ২)
খ. ব্যভিচারে লিপ্ত ব্যক্তি বিবাহিত হলে তার শাস্তি প্রস্তারাঘাতে মৃত্যু। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন বিবাহিত নারী ও পুরুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন তাদের মৃত্যু (নিশ্চিত হওয়া) পর্যন্ত পাথর নিক্ষেপ করো।’
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৫৫৩)
২. মুহারিবের শাস্তি : ধর্ষক যদি অস্ত্রধারণ করে অথবা অন্য কোনো উপায়ে ধর্ষিতাকে জীবনের হুমকি দেয়, তবে তার ওপর মুহারিবের শাস্তি প্রয়োগ করা হবে। মুহারিব হলো, যে ব্যক্তি ত্রাস সৃষ্টি করে কোনো কিছু কেড়ে নেয়। চাই ত্রাস সৃষ্টিকারী অস্ত্র ব্যবহার করুক বা না করুক। মুহারিবের শাস্তি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি হচ্ছে—তাদের হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে বা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে কিংবা দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। এটি তাদের পার্থিব লাঞ্ছনা, আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৩৩)
৩. উঁচু স্থান থেকে ফেলে হত্যা : ধর্ষক যদি বলাৎকার করে, তখনো তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এই শাস্তি কিভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে তা নিয়ে ফিকহের ইমামদের মতভিন্নতা আছে। তাহলো : ক. তাকে প্রস্তারাঘাতে হত্যা করা হবে, খ. তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হবে, গ. তাকে উঁচু স্থান থেকে ফেলে দেওয়া হবে এবং ওপর থেকে তার ওপর পাথর নিক্ষেপ করা হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-সহ একদল সাহাবি শেষোক্ত পদ্ধতিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
(আস সিয়াসাতুশ শরইয়্যা, পৃষ্ঠা-১৩৮)
৪. মৃত্যুদণ্ড : ধর্ষক যদি কোনো শিশুকে ধর্ষণ করে এবং এতে তার মৃত্যু হয়, তবে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। একইভাবে কোনো নারীকে ধর্ষণের আগে বা পরে যদি তাকে হত্যা করা হয়, তবে হত্যাকারী ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। বেশির ভাগ ফকিহের মতে, এমন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড তরবারির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কেউ তোমাদের সঙ্গে সীমা লঙ্ঘন করলে তোমরাও তার সঙ্গে অনুরূপ আচরণ করো।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৯৪;
তাফসিরে কুরতুবি : ২/৩৫৮)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের বিধান দেওয়া হয়েছে।’