নিজেস্ব প্রতিবেদক:
শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন হলেও দাম পাচ্ছেন না ঈশ্বরদীর কৃষকেরা। উৎপাদিত সবজির কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। বাজারে সরবরাহ বেশী এবং ক্রেতা কম থাকায় জমিতেই নষ্ট হচ্ছে অধিকাংশ সবজি।
কৃষি বিভাগ জানায়, ঈশ্বরদীসহ সারাদেশে একযোগে শীতকালের সবজি উঠতে শুরু করায় এমন দরপতন ঘটেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাথে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সমন্বয় না থাকার কারণে কৃষকের কষ্টার্জিত সবজি নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে।
কৃষকরা বলছেন, দিনমজুর দিয়ে জমি থেকে সবজি তুলে বাজারে এনে বিক্রি করলে যে টাকা পাওয়া যায় তাতে মজুরি ও পরিবহন খরচ ওঠে না। লাভ তো দূরের কথা, ঘর থেকে টাকা এনে খরচ করতে হচ্ছে। তাই তারা জমি থেকে সবজি তোলা বন্ধ করেছেন।
মঙ্গলবার ঈশ্বরদীর পাইকারি বাজারে ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৮০-১০০ টাকা মণ, মূলার কেজি ৫০ পয়সা, শিম ৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। তেমনি বেগুনের দামও ৩০ টাকা কেজি থেকে কমে ১২-১৫ টাকা কেজি হয়েছে। কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ২০ টাকা কেজি।
সাহাপুর ইউনিয়নের মানিকনগর গ্রামের কৃষক শাহিনুজ্জামান শাহিন জানান, তিনি ৪ বিঘায় মূলার চাষ করেছেন। বাজারে মূলা কেনার লোক নেই। ২০ টাকা মণ দরে অর্থাৎ ৫০ পয়সা কেজিতে বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যায়, তাতে শ্রমিকের মজুরি ও হাটে নিয়ে আসার গাড়ি ভাড়া ওঠে না। তাই তিনি জমি থেকে মূলা ওঠানো বন্ধ রেখেছেন।
চাষি মাজদার রহমান জানান, এক বিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ করতে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। সঙ্গে রয়েছে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ। লাভের মুখ না দেখে উল্টো জমিতে ফুলকপি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
মুলাডুলি শেখপাড়া এলাকার শিম চাষি রহমত উল্লাহ জানান, শিমের জমিতে প্রতিদিনই খরচ করতে হয়। এখন বাজারে দাম ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা মণ অর্থাৎ ৮ টাকা কেজি। ৬০০ টাকা মজুরিতে শ্রমিক লাগিয়ে শিম তুলে বাজারে বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যায় তাতে তোলার খরচই উঠছে না। যেকারণে শিম তোলা বন্ধ রয়েছে।
পাইকারি বাজারের আড়ৎদার বকুল জানান, দাম বাড়লে অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করা হয়। এখন তো দাম কমে কৃষকের লোকসান হচ্ছে। এখন কৃষকের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা দরকার।
কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি পদকপ্রাপ্ত কৃষক সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ বলেন, প্রথমদিকে পেঁয়াজ, কফিসহ সবজির দাম বেশী দেখে কৃষকরা সারাদেশে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশী সবজির আবাদ করেছে। যেকারণে এখন বাজারে সরবরাহ বেশী। কৃষকরা ঘরের সোনাদানা বিক্রি করে এবং এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আবাদের পিছনে টাকা ঢেলে এখন হায়হায় করছে। কৃষি বিভাগের কোন ডাটাবেজ নেই। যেকারণে চাহিদার তুলনায় একই ফসল বেশী আবাদ হয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যদি কৃষকের ডাটাবেজ তৈরী করে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষিপণ্য উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে এই দুরবস্থার সৃষ্টি হবে না। তাছাড়া কৃষি বিপণন বিভাগের বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য পদক্ষেপ গ্রহন করা প্রয়োজন।