উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় হত্যা বাবার মরদেহ মর্গে রেখে পরীক্ষা কেন্দ্রে মেয়ে
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি

রাজশাহী প্রতিনিধি:
মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবা আকরাম আলীকে (৪৫) পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত বাবার মরদেহ মর্গে রেখে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা দিয়েছে মেয়ে রাকিয়া ওরফে আলফি (১৬)।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহী নগরীর তালাইমারী এলাকায়। এর আগে গতকাল বুধবার (১৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর তালাইমারি শহীদ মিনার এলাকায় মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবা আকরাম আলীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
এসময় আলফির বড় ভাই ইমাম হাসান অনন্তও আহত হন। নিহত আকরাম হোসেন পেশায় একজন বাসচালক। নিহত আকরাম রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য এবং তালাইমারি এলাকার মৃত আজাদার আলীর ছেলে।এই ঘটনায় নিহতের ছেলে ইমাম হাসান অনন্ত বাদী হয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় সাতজনসহ অজ্ঞাত আর চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামিরা হলেন- তালাইমারি শহীদ মিনার এলাকার কালু মিয়ার ছেলে মো. নান্টু (২৮), মৃত রতনের ছেলে মো. বিশাল (২৮), মৃত আবদুস সাত্তারের ছেলে মো. খোকন মিয়া (২৮)। এছাড়া তালাইমারি বাবর আলী রোড এলাকার শাহীনের ছেলে তাসিন হোসেন (২৫), মো. অমি (২৫), জামালের ছেলে মো. নাহিদ (২৫), পিরুর ছেলে মো. শিশির (২০)।
মামলা সূত্রে জানা যায়, তালাইমারি শহীদ মিনার এলাকায় আসামিরা হাতে লোহার রড, বাঁশের লাঠি, কাঠের লাকড়ি, ইট নিয়ে ইমান হাসানের ওপর আক্রমণ করে। এসময় নান্টুর হুকুমে অন্য আসামিরা তাকে এলাপাথারিভাবে মারপিট করতে থাকে। প্রাণে বাঁচার তাগিদে চিৎকার করলে বাবা আকরাম বাঁচাতে এগিয়ে এলে নান্টুর হুকুমে আসামিরা তাকে এলাপাথারি লাথি, কিলঘুষি মারতে থাকে। এসময় ইটের আধলা দিয়ে হত্যার উদ্দ্যেশে বাবা আকরামের মাথার পেছন দিক থেকে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বর্তমানে নিহত আকরাম হোসেনের মরদেহ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে এই ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করেছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
নিহতের স্ত্রী মুক্তি বেগম বলেন, মেয়েকে এলাকার নান্টুসহ কয়েকজন উত্ত্যক্ত করত। ঘটনার দিন বিকেলে মেয়ে ও আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। মেয়ে বাড়িতে এসে বিষয়গুলো বলে। এরপর নান্টুর পরিবারকে জানানো হয়। এতে নান্টুর পরিবার ক্ষিপ্ত হয়ে ছেলেকে অভিযোগের বিষয়ে জানায়। তারপরে নান্টু কয়েকজন মিলে আমার ছেলে অনন্তকে রাত ৮টার দিকে মারধর করে। এসময় ছেলেকে মারধর করতে দেখে আমার স্বামী এগিয়ে গেলে তাকেও মারপিট করে। আকরামকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে মেরে ফেলে উত্ত্যক্তকারীরা।
তিনি আরও বলেন, পরে আমার স্বামী ও ছেলেকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এসময় চিকিৎসক আমার স্বামীকে মৃত ঘোষণা করে। ছেলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মেয়ের এসএসসি পরীক্ষা চলছে। বাবার লাশ রেখে মেয়েটা পরীক্ষা দিতে গেল। সারারাত অনেক কান্না করেছে বাবার জন্য। সকালে সে পরীক্ষা দিতে যাবে না। প্রতিবেশী স্বজনরা অনেক বুঝিয়ে তাকে পরীক্ষা দিতে পাঠিয়েছে। আল্লাহ জানে মেয়েটার পরীক্ষা কেমন হবে। আমরা স্বামীকে যারা হত্যা করেছে, আমার সন্তানদের যারা বাবাহারা করেছে তাদের বিচার চাই।
জানা গেছে, গত ১০ এপ্রিল এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। আজ বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র বিষয়ের পরীক্ষা। আলফি রাজশাহী শিরোইল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। সে রাজশাহীর অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। আলফি মানবিক বিভাগের ছাত্রী।
অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, সে ক্লাসের ভালো ছাত্রী। তাদের পরীক্ষা শিরোইল উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুনেছি উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় তার বাবাকে মারধর করে মেরে ফেলা হয়েছে। পরীক্ষার্থী আলফির বাবার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।