‘উপদেষ্টা’ বশির উদ্দিনকে হত্যা মামলার বাদী সুফিয়া চেনেন না

প্রকাশিত: ১২:৩৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলিতে নিহত মাগুরার শ্রীপুরের সোহান শাহ হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামির তালিকায় নাম রয়েছে ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’ নামের এক ব্যক্তির।

রোববার (১০ নভেম্বর) অন্তর্র্বতী সরকারের নতুন চার উপদেষ্টা নিয়োগের পর বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন শপথ নিলে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দায়েরকৃত ওই মামলাটি নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টা হওয়া ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিন ও তার বাবার নামের সঙ্গে আংশিক মিলে গেলেও নিহতের মা বাদী সুফিয়া বেগম জানিয়েছেন, তিনি এ নামের কাউকে চেনেন না।

জানা যায়, সোহান শাহ হত্যা মামলার ৪৯নং আসামি শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়াকে নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে ওই আসামি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই মামলাটির বাদী মোছা. সুফিয়া বেগমের।

সোহান হত্যা মামলার বিবরণে দেখা যায়, গত ১৯ অক্টোবর সোহানের মা সুফিয়া বেগমের দায়েরকৃত ওই মামলাটিতে ৪৮ নং ক্রমিকে যশোর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য পরিচয়ে শেখ আফিল উদ্দিন ভূঁইয়া এবং ৪৯নং ক্রমিকে শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়াকে আসামি করা হয়েছে। যেখানে উভয়ের বাবার নাম শেখ আকিজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া ওই মামলায় আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখরসহ ৫৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে।

অন্তর্র্বতী সরকারের শিল্প উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত শেখ বশির উদ্দিনও যশোরের বিশিষ্ট শিল্পপতি শেখ আকিজ উদ্দিনের ছেলে। যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আফিল উদ্দিনের ভাই বশির উদ্দিনকে বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে শপথ গ্রহণের পর বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন হত্যা মামলায় তার নাম থাকার বিষয়ে কিছু জানা নেই বলে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন।
উল্লেখিত আসামিদের পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বাদী সুফিয়া বেগম বলেন, সন্তান হারিয়ে আমি প্রায় পাগল অবস্থা। এমন সময়ে মোবাইল করে আমাকে ঢাকায় আদালতে যেতে বললে, আমার স্বামী সেকেন্দার শাহের সঙ্গে গিয়েছিলাম। ঢাকায় যাওয়ার পর স্বাক্ষর করেছি কিন্তু ওই মামলায় কারা আসামি, কাদের নাম লেখা আছে সেটি জানা নেই। তবে মামলা যারাই করুক, আমি স্বাক্ষর করেছি। মামলায় যাদের নামই থাকুক, আমি ন্যায়বিচার চাই। চাই আর কোনো মা যেন অকালে সন্তান না হারায়।

এর আগে সোমবার বিকেলে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘সোহান হত্যা মামলায় শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া নামে এক আসামি রয়েছে। এই নামের সঙ্গে উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনের নাম, তার বাবার নাম ও বাসার ঠিকানার আংশিক মিল রয়েছে। তবে আসামি যে ব্যক্তিকে করা হয়েছে তার পূর্ণ নাম শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া। ভূঁইয়া অংশটি নিয়ে আমাদের সংশয় রয়েছে আসলে দুজন একই ব্যক্তি কি না। এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।’

প্রসঙ্গত, ঢাকার রামপুরায় ভার্গো নামের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন সোহান। গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রামপুরা এলাকায় ছাত্র-জনতার একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিলে অংশ নিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা সদরের সেকেন্দার শাহের ছেলে সোহান শাহ।