এই সত্য বুঝিতে হইবে-

প্রকাশিত: ১২:৪৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২৫

নিজেস্ব প্রতিবেদক:

 

তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশ স্বাধীনতা লাভ করিবার পর হইতে এখন পর্যন্ত বিবাদ, দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের মধ্যে নিমজ্জিত রহিয়াছে। স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে যে মহৎ উদ্দেশ্য বিদ্যমান ছিল, তাহা বাস্তবায়নের পথে এই দেশগুলি ব্যর্থ হইয়াছে। প্রকৃত শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করিবার পরিবর্তে শোষণ, দুর্নীতি, স্বার্থপরতা ও অনিয়ম এই সকল দেশে অধিকতর প্রবল হইয়া উঠিয়াছে। জাতির শক্তি যেইখানে একত্রিত হওয়া উচিত ছিল, সেইখানে বিভেদই তাহাকে দুর্বল করিয়াছে।

স্বাধীনতা-উত্তর সময়কালে অধিকাংশ তৃতীয় বিশ্বের দেশে সুশাসনের পরিবর্তে ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বার্থান্বেষী রাজনীতি চলিয়া আসিয়াছে। যাহারা ক্ষমতায় আসিয়াছে, তাহারা বহু ক্ষেত্রে নিজেদের স্বার্থরক্ষায় এমন সকল কার্যকলাপ করিয়াছে, যাহা একটি সুস্থ সমাজের কাঠামো নষ্ট করিতে যথেষ্ট। জাতিকে একত্রিত করিবার পরিবর্তে তাহারা বিভক্তি ও সংঘাতকে আরো উসকাইয়া তুলিয়াছে। এই সকল দেশে এত অধিক বিবাদ-বিভক্তি দেখা যায় যে, যখন যাহাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় তখন তাহারা ক্ষমতার উত্তাপে অন্যদের প্রতি এমন ধরনের হুমকি ও হুংকার ছাড়েন, যাহা শুনিয়া স্বাভাবিক বোধসম্পন্ন মানুষের শরীরের লোম দাঁড়াইয়া যাইতে পারে।

অথচ ইউনাইটেড তথা একতা ব্যতীত কোনো দেশ বা জাতি উন্নতির শিখরে পৌঁছাইতে পারে না। একতার সেরা উদাহরণ হইল ‘ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা’। এই দেশটির জন্মের সময় ১৩টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ছিল বহু বিবাদ ও মতানৈক্য; কিন্তু তাহারা বুঝিয়াছিল যে একত্রে থাকিলে তাহাদের ভবিষ্যৎ অধিকতর সমৃদ্ধ হইবে। তাহারা নিজেদের ভিন্নতা ও বিবাদকে গৌণ করিয়া বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হইয়া, এক হইয়া নূতন রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করিয়াছিল। আজ সেই যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী রাষ্ট্র। তাহাদের শক্তি ও উন্নতির মূল রহিয়াছে ঐক্য। তদ্রুপ, ইউরোপীয় ইউনিয়নও একতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে ক্রমশ তাহাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করিতে চেষ্টা করিতেছে। অপর দিকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির ক্ষেত্রে এই ঐক্য যেন স্বপ্নের ন্যায় দূর। বিভক্ত সমাজের ফলে এই দেশগুলির উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হইতেছে। দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত হইতেছে জাতির শক্তি। তাহার ফলে স্বাধীনতার পর হইতে হতাহত হইয়াছে অযুত লক্ষ মানুষ। এই প্রাণহানি কোনোভাবেই কাম্য ছিল না।

আমরা দেখিতে পাই, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে নেতৃত্বের অভাব নাই; কিন্তু অভাব রহিয়াছে স্টেটসম্যানের। নেতৃত্বের গুণ হইল ক্ষমতা অর্জন করা; কিন্তু স্টেটসম্যানের কাজ হইল জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করিয়া উন্নতির পথে চালিত করা। প্রকৃত স্টেটসম্যান জাতির বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করিয়া কাজ করেন। আর ইউনাইটেড হইবার বিষয়টি জাতির বৃহত্তর স্বার্থের সহিত ওতপ্রোতভাবে জড়িত। স্পষ্টতই, তৃতীয় বিশ্বের এই দেশগুলির বর্তমান সংকট হইল নেতৃত্বগণের আত্মস্বার্থ ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠিয়া কাজ করিতে না পারা। যদি তাহারা দলমত, ধর্মবর্ণের ঊর্ধ্বে উঠিয়া কাজ করিতে পারেন, তাহা হইলেই জাতি শক্তিশালী হইবে।

দুঃখজনকভাবে তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত মানুষ বুঝিতেই পারেন না একতাবদ্ধ হইবার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব। তাহার ফলে সেই সকল দেশে স্বাধীনতার পর হইতে দশকের পর দশক ধরিয়া বিভিন্ন দ্বন্দ্ব-বিবাদে হাজার হাজার লোক মৃত্যুবরণ করিয়াছে। এই হতাহতের তো কোনো প্রয়োজন ছিল না। তৃতীয় বিশ্বে মাঝেমধ্যে পরিবর্তনের হাওয়া আসে, অনেকে স্বপ্ন দেখেন সেই সকল পরিবর্তনের ভিতর দিয়া জাতির মধ্যে জাকিয়া বসা দ্বন্দ্ববিবাদ দূর হইবে, ইউনিটি আসিবে; কিন্তু ঐক্য যেন দূর পৃথিবীর তারা!

তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহের জন্য এই সময় এক কঠিন সংকটের সময়। যদি তাহারা এই বিভেদ ও সংঘাত অতিক্রম করিতে পারে, তাহা হইলে উন্নতির দ্বার উন্মুক্ত হইবে। বিভক্তি তাহাদের দুর্বল করিবে; কিন্তু একতা তাহাদের দান করিবে অনন্য শক্তি। একতাই হইল জাতির প্রকৃত শক্তি। কেবল ইউনিটির মাধ্যমেই একটি জাতি উন্নত হইবার স্বপ্ন পূরণ করিতে পারে। ইহার বাহিরে কোনো শর্টকাট বা সহজ উপায় নাই। এই সত্য সকলকে বুঝিতে হইবে।