বাগেরহাট প্রতিনিধি:
একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি মোহাম্মদ রফিক (৮০) আর নেই। রোববার (৬ আগস্ট) উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে রাত ৯টার দিকে তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার (৬ আগস্ট) দিবাগত গভীর রাতে নিউজ পোস্টকে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাগেরহাটের বেলায়েত হোসেন ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান শিক্ষক ও কবির চাচাতো ভাই মো. শিবলী হাওলাদার।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কবির গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের চিতলীতে অবস্থানকালে রোববার সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তখন প্রথমে বাগেরহাট এবং পরে বরিশাল নেওয়া হয়। বরিশালের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে বিভিন্ন পরীক্ষার পর হার্টের সমস্যাসহ বেশি কিছু শারীরিক জটিলতা ধরা পড়লে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা নেওয়ার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যরা তাকে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা রওনা হওয়ার পর পথেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
তার মরদেহ বাগেরহাটে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। কবি মোহাম্মদ রফিক দীর্ঘদিন যাবত বার্ধক্যজনিত রোগসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।
ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলন ও কবিতায়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে আশির দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে কাব্যিক রসদ যুগিয়ে বিখ্যাত হয়ে আছেন কবি মোহাম্মদ রফিক।
কবি মোহাম্মদ রফিক ১৯৪৩ সালের ২৩ অক্টোবর বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের বৈটপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সামছুদ্দীন আহমদ এবং মা রেশাতুন নাহারের আট সন্তানের মধ্যে মোহাম্মদ রফিক সবার বড়। মোহাম্মদ রফিকের শৈশব কাটে বাগেরহাটে।
১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি পাকিস্তানের সামরিক শাসন বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন। পাকিস্তানের সামরিক আদালত তাকে দশ বছরের কারাদণ্ড দেয়, কিন্তু এমএ পরীক্ষার জন্য ছাড়া পান তিনি। ১৯৭১ সালে তিনি প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের ১ নং সেক্টরের কর্মকর্তা হিসেবে এবং পরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করার পর তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে যোগ দেন। ২৯ জুন ২০০৯ পর্যন্ত দীর্ঘকাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ২০০৯ সালে অবসরের পর তিনি ঢাকায় থাকতেন।
কবির মরদেহ ঢাকায় না নিয়ে গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে নেওয়া হয়। আজ সোমবার (৭ আগস্ট) জানাজা শেষে পরিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয় বলে পারিবারিক সূত্রে জানিয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৭০ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বৈশাখী পূর্ণিমা’ প্রকাশিত হয়। ১৯৭৬ সালে প্রকাশ পায় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ধুলার সংসারে এই মাটি’।
মোহাম্মদ রফিক একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থ পুরস্কার, জেমকন সাহিত্য পুরস্কারসহ বিভিন্ন স্বীকৃতি ও পুরস্কার অর্জন করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে ‘কপিলা’, ‘খোলা কবিতা’, ‘গাওদিয়া’, ‘মানব পদাবলি’, ‘আত্মরক্ষার প্রতিবেদন’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।