একে অপরকে পানি ছিটিয়ে শুদ্ধ করে নিলেন মারমা তরুণ-তরুণীরা
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
জেলা প্রতিনিধি,রাঙামাটিঃ
মারমা জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় উৎসব সাংগ্রাই জলোৎসবে মেতেছে পাহাড়ের মারমারা। মারমা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আগামীকাল বুধবার (১৭ এপ্রিল) শুরু হবে মারমাদের নতুন বছর। নতুন বছর শুরুর প্রাক্কালে পুরনো বছরের দুঃখ কষ্টকে বিদায় দিতে জলের মাধ্যমে আনন্দ উৎসবে মেতেছে মারমারা।
পাহাড়ের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব বৈসাবির শেষদিন জলকেলিতে মেতে উঠে মারমা জনগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা। পুরোনো বছরের সকল দুঃখ, কষ্ট, বেদনাকে ভুলে গিয়ে একে অন্যের প্রতি ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে একে অপরকে পানি ছিটিয়ে শুদ্ধ করে নিলেন মারমা তরুণ-তরুণীরা।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাঙামাটির চিং হ্লা মং মারী স্টেডিয়ামে মারমা সংস্কৃতি সংস্থা (মাসস) এর কেন্দ্রীয় কমিটির আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী এই জলকেলি বা পানি উৎসবে মারমা জনগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা মেতে উঠে।
আমাদের সংস্কৃতি আমাদের পরিচয়-স্লোগানে জলোৎসবে মারমা সংস্কৃতি সংস্থা (মাসস) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, গেস্ট অব অনার ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য জ্বরতি তঞ্চঙ্গ্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ, রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সোহেল আহমেদ, রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, দুর্নীতি দমন কমিশন রাঙামাটির উপ-পরিচালক জাহিদ কামাল প্রমুখ। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে জলোৎসবের এই অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পর্যটকরা হাজির হন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, বৈসাবি উৎসব পার্বত্য চট্টগ্রামে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এটি শুধু সাংস্কৃতিক উৎসবই নয়, এর সঙ্গে ধর্মীয় অনুভূতিও জড়িত। তাই এটি সামাজিক সাংস্কৃতিক উৎসবের পাশাপাশি ধর্মীয় উৎসবও।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন সকল ভাষাভাষি ও সকল ধর্মের লোক সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করবেন। তারই সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে। আজকের এই এতো লোকের উপস্থিতি প্রমাণ করে আমরা শান্তি চাই, সম্প্রীতি চাই, ঐক্য চাই। দেশের কল্যাণে যা যা করার সবাই স্ব স্ব অবস্থান থেকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
মারমা সংস্কৃতি সংস্থা (মাসস) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, সংস্কৃতি ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বিকাশের লক্ষ্যে প্রতিবছর এই আয়োজন। সাংগ্রাই উৎসবের মাধ্যমে মারমা জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়। যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে পারে।
আলোচনা সভা শেষে অতিথিগণ ঘণ্টা বাজিয়ে জলকেলি উদ্বোধন করেন। এরপর সকলে একে-অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে সকল অবসাদ দূর করে দেয়। জলকেলি অনুষ্ঠানের পর মারমা জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহি গান ও নাচ পরিবেশন করা হয়। বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থেকে আগত কয়েক হাজার মারমা নারী-পুরুষ একে-অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে উৎসব পালন করতে থাকে।