ইসলামী ডেস্ক রিপোর্টঃ
হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। কোনো ব্যক্তি যদি কাবা ঘরে যাওয়া ও ফিরে আসা পরিমাণ অর্থের মালিক হয়, এছাড়াও তার মৌলিক খরচ ও পরিবারের ভরণপোষণের খরচ থাকে, তবে তার উপর হজ ফরজ। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘তোমরা হজ ও ওমরাহ আল্লাহর জন্য পালন কর।’ (সুরা বাকারা: ১৯৬)
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন, মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ ঘরের হজ করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য। (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)।
হজের ফরজ তিনটি আর ওয়াজিব ছয়টি। এই কাজগুলো ৭ থেকে ১২ জিলহজের মধ্যে প্রতিটি আমলের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করতে হয়।
তিন ফরজ:
১. ইহরাম বাঁধা
২. তওয়াফ করা।
৩. আরাফার ময়দানে অবস্থান
ছয় ওয়াজিব:
১. মুজদালিফায় অবস্থান
২. কংকর নিক্ষেপ করা
৩. কুরবানি করা
৪. মাথার চুল ন্যাড়া বা খাটো করা
৫. সাঈ করা
৬. বিদায়ী তওয়াফ
ইহরাম কী?
হজ ও ওমরার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ইহরাম। নির্দিষ্ট স্থান থেকে হজ ও ওমরার নিয়তে নির্ধারিত নিয়মে ইহরাম বাঁধতে হয়। ইহরাম পরিধানের পর বৈধ অনেক কিছু হারাম হয়ে যায়।
কখন ইহরাম বাঁধবেন?
সফর যদি সরাসরি মক্কায় হয়, তাহলে ঢাকা থেকে ইহরাম বেঁধে যেতে হবে। আর যদি প্রথমে মদিনা বা অন্য কোথাও যেতে হয়, তাহলে মক্কায় প্রবেশের সময় ইহরাম বাঁধতে হবে।
ইহরাম বাঁধার ফরজ দুটি
নিয়ত করা: হজের নিয়তে ইহরাম বাঁধা। নিয়ত হলো মূলত অন্তরের সিদ্ধান্ত। হজের নিয়ত মুখে এভাবে করতে পারেন, হে আল্লাহ, আমি হজের নিয়ত করলাম, আমার জন্য হজের সব কাজ সহজ করে দিন, আমার হজ কবুল করে নিন।
তালবিয়া পাঠ করা: তালবিয়া হলো—‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’ তালবিয়া উচ্চস্বরে পড়া। পরপর তিনবার তালবিয়া পাঠ করা মুস্তাহাব।
ইহরাম পরার আদব-
১. ক্ষৌরকার্য করা।
২. গোসল করা।
৩. মাকরুহ সময় না হলে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া। সম্ভব হলে প্রথম রাকাতে সুরা কাফিরুন আর দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পড়া।
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ-
১. সেলাইকৃত পোশাক
২. সুগন্ধি
৩. স্বামী-স্ত্রীর যৌন সম্পর্ক বা কথাবার্তা
তওয়াফ কী?
তাওয়াফ শব্দের অর্থ ঘোরা বা প্রদক্ষিণ করা। পরিভাষায় তাওয়াফের নিয়ত করে পবিত্র কাবা ঘরের হাজরে আসওয়াদের কোনা থেকে শুরু করে চারপাশে সাত বার ঘোরাকে তাওয়াফ বলা হয়।
তাওয়াফে কুদুম-
হজে গিয়েই প্রথমে তওয়াফ করবেন। একে তওয়াফে কুদুম বলে। এটা সুন্নত। কিন্তু যে হাজি তামাত্তু করবেন, তিনি যেহেতু ৭ তারিখ দিবাগত রাতে ইহরাম বাঁধবেন, তার তওয়াফে কুদুম নাই।
৭ ও ৮ জিলহজের আমল- সাত তারিখ রাতেই হাজিরা মিনায় চলে যাবেন। আট তারিখ রাতে মিনায় অবস্থান করতে হবে। মিনায় দোয়া কবুল হয়, তাই বেশি বেশি দোয়া করা উচিত।
৯ জিলহজ আরাফায় অবস্থান- জিলহজের ৯ তারিখ মিনা থেকে আরাফার উদ্দেশে রওনা দিতে হবে। আরাফায় অবস্থানের আগে গোসল করা সুন্নত। মিনার ৬ কিলোমিটার পরে আরাফার ময়দান। বাংলাদেশিদের তাবু সাধারণত ময়দানের শেষ দিকে থাকে, ওই পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ১২/১৩ কিলোমিটার।
নয় তারিখ দুপুরে সূর্য পশ্চিমে ঢলে যাওয়ার পর আরাফায় অবস্থান শুরু হয়, এই সময় কিছুক্ষণ অবস্থান করতে পারলেই ফরজ আদায় হয়ে যাবে। এখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকা ওয়াজিব। নয় তারিখ সুবহে সাদিকের আগেও যদি কেউ আরাফায় অবস্থান করেন, তার ফরজ আদায় হয়ে যাবে।আরাফার ময়দানে যদি মসজিদে নামিরায় ইমামুল হজের পেছনে নামাজ পড়লে দুই রাকাত জোহর ও দুই রাকাত আসর একসাথে পড়তে হবে। সেখানে নামাজ না পড়লে জোহর ও আসর আলাদা আলাদা পড়তে হবে।
এরপর মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা দিতে হবে। ওখানে গিয়েই মাগরিব ও এশা পড়ার নিয়ম। কিন্তু যদি প্রবল ধারণা হয় মুজদালিফায় যাওয়ার আগেই ফজরের ওয়াক্ত চলে আসবে, তাহলে রাস্তায় মাগরিব ও এশা পড়ে নেবেন।
১০ জিলহজের আমল-
প্রথম ওয়াজিব: হজের প্রথম ওয়াজিব হলো মুজদালিফায় অবস্থান। এখানে অবস্থানকালে আল্লাহর জিকির করুন ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
দ্বিতীয় ওয়াজিব: কংকর নিক্ষেপ করা। ১০ জিলহজের দিন আলো ফোটার আগেই আল্লাহর রসুল (সা.) কংকর নিক্ষেপের জন্য মিনার উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। দশ তারিখ সুবহে সাদিক থেকে এগারো তারিখ সুবহে সাদিক পর্যন্ত প্রথম দিনের কংকর নিক্ষেপের সুযোগ আছে। এ সময়ের মধ্যে ভাগ আছে—
-সূর্যোদয় থেকে জোহর পর্যন্ত মুস্তাহাব সময়।
-জোহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মুবাহ সময়।
-সূর্যাস্ত থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত মাকরুহ সময়, যদি কেউ বিনা ওজরে বিলম্ব করে।
তৃতীয় ওয়াজিব: এরপর হজের তৃতীয় ওয়াজিব, অর্থাৎ কোরবানি আদায় করা।
চতুর্থ ওয়াজিব: মাথা ন্যাড়া বা চুল খাটো করবেন।এর মধ্য দিয়ে হজের ইহরাম থেকে বের হয়ে যাবেন। স্ত্রী সঙ্গম ছাড়া যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। এরপর মক্কায় এসে ফরজ তওয়াফ আদায় করবেন। ফরজ তওয়াফ ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত করা যাবে।
পঞ্চম ওয়াজিব: এরপর সাঈ করা। সাঈ হলো সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সাতবার দৌড়ানোর নাম। সাঈর জন্য নিয়ত জরুরি, অজু মুস্তাহাব।
১১, ১২ ও ১৩ জিলহজের আমল- ১১ ও ১২ তারিখ কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। নিক্ষেপের সময় জোহরের পর থেকে শুরু হবে, এর আগে নিক্ষেপ করলে হবে না। শুরুটা হবে মিনার দিক থেকে, তিন শয়তানকেই কংকর নিক্ষেপ করতে হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় শয়তানকে কংকর নিক্ষেপের পর মধ্যবর্তী সময়ে দোয়া কবুল হয়।১৩ তারিখ কংকর নিক্ষেপ করা ঐচ্ছিক। তবে কেউ যদি সুবহে সাদিকের পর মিনায় অবস্থান করেন, তার জন্য কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব হয়ে যাবে।
ষষ্ঠ ওয়াজিব: এরপর একবার তওয়াফ করলেই বিদায়ী তওয়াফ আদায় হয়ে যাবে। কেউ যদি একাধিকবার তওয়াফ করে, তাতে কোনো সমস্যা নেই, তার শেষ তওয়াফ বিদায়ী হিসেবে গ্রহণীয় হবে। এর মধ্য দিয়েই হজ সমাপ্ত হবে।