এখনও ষড়যন্ত্র করছেন ড. ইউনূস, মামলা চলবে: আইনমন্ত্রী
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলার প্রসঙ্গ টেনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘দেশে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, অপরাধ করলে এর বিচার হবে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে এবং চলবে। আদালতে যার যা বিচার হবে, সে বিচারের রায় সবাইকে মেনে নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে মিশে ওই সুদখোর পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। তিনি এখনও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। এ দেশের মানুষের রক্ত চুষে বিদেশে কোম্পানি বানিয়েছেন। তার (ড. ইউনূসের) প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা পাওনা টাকা নিয়ে মামলা করেছেন। আদালতে বিচারকাজ চলমান আছে, এটি চলবে।’
শুক্রবার (০১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কুটি ইউনিয়নের জাজিয়ারা গ্রামে গৃহহীনদের মাঝে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের চাবি হস্তান্তর উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক ঋণ বাতিল করেছিল উল্লেখ করে আনিসুল হক বলেন, ‘সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু বানাবো এবং তা করে দেখিয়েছেন। দুর্নীতি হয়েছে মর্মে বিশ্বব্যাংক কানাডার আদালতে গিয়েছিল। সেখানে প্রমাণিত হয়েছে, পদ্মা সেতু নিয়ে কোনও ধরনের দুর্নীতি হয়নি। অথচ ওই সুদখোর তখন পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘একটি চক্র আছে, তারা অন্যায় করলেও গায়ে টোকা দেওয়া যাবে না। যদি টোকা দেন তাহলে বিদেশি বাবা-মায়ের কাছে গিয়ে লাফালাফি শুরু করে দেন। তাদের কিছু টাকা ধরিয়ে দেন। আর তারা বিবৃতি লেখা শুরু করেন।’
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা আইন অনুযায়ী চলবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘মামলার বিচার নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করবো না। তবে কয়েকটি কথা বলে রাখি, ১৯৯৬ সালে ড. ইউনূসকে একটা মোবাইল ফোন কোম্পানির লাইসেন্স দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার নাম গ্রামীণফোন। পরে তিনি নরওয়ের এক কোম্পানির কাছে গ্রামীণফোনের বেশিরভাগ শেয়ার বিক্রি করে দেন। ৩২ শতাংশের মতো শেয়ার রেখেছিলেন। দেশের সব মানুষ আয়কর দেয়। কিন্তু তিনি (ড. ইউনূস) আয়কর দেবেন না। যখন এটা নিয়ে তাকে ধরা হয়েছে, মামলা হয়েছে; তখন হাইকোর্টে গেছেন। হাইকোর্টকে তিনি বলেছেন, মামলাটি মিথ্যা। তখন হাইকোর্ট বলেছেন, মামলা সঠিক আছে। পরে তিনি গেলেন আপিল বিভাগে। আপিল বিভাগে গিয়ে বলেছেন, মামলাটি মিথ্যা। আপিল বিভাগ বলেছেন, মামলা সঠিক। পরে আদালতের নির্দেশে সাড়ে ১২ কোটি টাকা আয়কর পরিশোধ করলেন ড. ইউনূস।’
ড. ইউনূস গ্রামীণফোনের ৩২ শতাংশ শেয়ারের মালিক উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কোম্পানির নীতিমালা অনুযায়ী লাভের পাঁচ শতাংশ শ্রমিকদের দিতে হয়। তিনি তা দেননি। শ্রমিকরা তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। তিনি হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে গেছেন। আদালত বলেছেন, মামলা চলবে। এ অবস্থায় বিশ্বের ১৬০ জন বিশিষ্ট নাগরিক তার বিচার স্থগিত করার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়ে বলেছেন, দেশে নাকি সঠিক বিচার হয় না। তাদের এমন মন্তব্য দেখলে কষ্ট লাগে। কারণ দেশের বিচারব্যবস্থা স্বাধীন। বিচারব্যবস্থা স্বাধীন না হলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে এত সময় লাগতো না। আমরা বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচার আইনে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে পারতাম। অথচ ১৪ বছর সময় নিয়ে মামলা পরিচালনা করেছি। পরবর্তীতে স্বাধীনভাবে এই মামলার নিরপেক্ষ রায় দিয়েছেন আদালত।’
নানা কৌশলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার আটকে রাখা হয়েছিল উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারের আমলে বিচারকদের হাতে-পায়ে ধরেছি, অথচ মামলার কার্যক্রম শেষ করা হয়নি। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী হন, তখন খুনিদের সাজা কার্যকর করেছি আমরা।’
অনুষ্ঠানে ৫২টি পরিবারের মাঝে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের চাবি বিতরণ করেন মন্ত্রী। এ সময় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকায় ভোট চান তিনি। এতে আরও বক্তব্য রাখেন কসবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল কাউসার ভূঁইয়া জীবন, কসবা পৌরসভার মেয়র এমজে হাক্কানী ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এমএ আজিজ প্রমুখ।