দেশে আরেক দফা বেড়েছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) খুচরা দাম। প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ডের আল কুদসের প্রধান কাসেম সোলেইমানি যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় ইরাকে নিহত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাজারে তেল ও গ্যাসের দাম বেড়ে যায়। বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির যুক্তি দেখিয়ে যানবাহন ও রান্নার কাজে ব্যবহৃত এ গ্যাসের দাম বাড়িয়েছেন দেশীয় বিক্রেতারা। অথচ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বর্ধিত মূল্যের গ্যাস দেশে আসতে অন্তত এক মাস সময় লাগবে। অর্থাৎ আগের দামে কেনা এলপিজি ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে বিক্রি করছেন আমদানিকারক ও বিক্রেতারা। এ দাম বৃদ্ধিকে অনৈতিক ও অন্যায্য বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আমদানিকারকরা জানান, বেসরকারি কোম্পানিগুলো বিদেশ থেকে এলপি আমদানির পর দেশে বোতলজাত করে বিক্রি করে। কোনো বাংলাদেশি কোম্পানি বিশ্ববাজার থেকে এলপি গ্যাস কেনার জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলার পর তা দেশে আসতে অন্তত এক মাস সময় লাগবে। গত শুক্রবার সোলেইমানি হত্যার পর শনিবার থেকে দাম বাড়ে এলপিজির। ওই দিনই বাংলাদেশে দাম বাড়ানো হয়। এ দামবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা নেই।
দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত হয় ১২ ও সাড়ে ১২ কেজি ওজনের এলপি গ্যাস সিলিন্ডার। বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরা জানান, শুক্রবার পর্যন্ত ১২ কেজির এলপি সিলিন্ডার জেলাভেদে ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। এখন তা ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ জানায়, মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নীতিমালা প্রণীত হয়নি। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কয়েকবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকও করেছে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। তবে গ্রাহকদের স্বার্থে এবং এলপিজি ব্যবসায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি। তাই প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো এলপিজিরও মূল্য নির্ধারণে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করা হয়েছে। আর বিইআরসি জানায়, এলপিজি একটি আমদানিনির্ভর পণ্য এবং এর আন্তর্জাতিক বাজার দ্রুতই উঠানামা করে। তাই কোন ফর্মুলায় এটি নির্ধারণ করা হবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।
দেশে বছরে ১৫ লাখ টনের বেশি এলপিজির চাহিদা রয়েছে। তবে আমদানি ও বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১০ লাখ টন। এর মধ্যে ২০ হাজার টন এলপিজি সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিক্রি করে। এটি মোট চাহিদার ২ শতাংশ। বাকি চাহিদা মেটায় বেসরকারি কোম্পানিগুলো। আর নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছামত দাম বাড়ায় বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন ভোক্তারা।