ওসমানী মেডিক্যালে ‘জলাতঙ্ক’, বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় নিচতলা

প্রকাশিত: ৮:১৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৭, ২০২৩

সিলেট প্রতিনিধি:

তিনি দিন ধরে বিরামহীন বৃষ্টি। নগরের বিভিন্ন এলাকা গোড়ালি থেকে হাঁটু পানিতে মগ্ন ছিল। তবে শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে বৃষ্টির মাত্রা বাড়ায় আজ শনিবার ভোররাতে নগরের বেশির ভাগ এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়। সিলেটের ওসমানী হাসপাতালে পানি ঢুকে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়।

জলাবদ্ধ ঘর থেকে লাইভে নিজের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন খোদ সিলেট সিটি করপোরেশনের এক কাউন্সিলর। তবে সকাল ৯টার পর বৃষ্টি কমে যাওয়ায় বেশির ভাগ এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে।
ভারি বৃষ্টিপাতে চিকিৎসাসেবায় সিলেট বিভাগের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল শনিবার ভোর ৪টার দিকে জলমগ্ন হয়ে যায়। এতে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় ব্যাঘাত ঘটে।

ফলে বাধ্য হয়ে এমআরআইসহ নিচতলার বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখতে হয়। এ ছাড়া বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে থাকা জেনারেটকক্ষেও পানি প্রবেশ করায় সেটি চালানো সম্ভব হয়নি। বিঘ্নিত হয় বিদ্যুৎ সরবরাহ। ফলে হাসপাতালের ভর্তি রোগী, সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা দুর্ভোগে পড়ে।
তবে দিনে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বেলা আড়াইটার পর পানি নেমে যায়।
শনিবার দুপুরে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাত ৩টার পর থেকে পানি ঢোকা শুরু হয়। রাত ৪টার দিকে আমরা এখানে আসি।’

তিনি বলেন, ‘নিচতলার সব জায়গা পানি ঢুকেছে। এমআরআই মেশিনসহ অন্য যে সকল সার্ভিস নিচতলায় আছে সেগুলো আপাতত বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

জেনারেটর রুমও নিচতলায়। বিদ্যুৎ নেই। সেবা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে।’
এ বিষয়ে জানতে বিকেলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়ার সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিকেল ৩টার পর পানি নেমে যাওয়ার পর জেনারেটর কক্ষসহ বিভিন্ন পক্ষে আটকে পড়া পানি মেশিন দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে নগরের কাজলশাহ, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ এলাকা, বনকলা পাড়া, দরগামহল্লা, সেনপাড়া, আদিত্যপাড়া, কেওয়াপাড়া, কালীঘাট, বাগবাড়ী, কানিশাইল, লামাপাড়া, লালা দিঘিরপাড়, মাছুদিঘিরপাড়, বাদাম বাগিচা, শাহজালাল উপশহর, কুয়ারপাড় সোবহানীঘাট, যতরপুর, শিবগঞ্জ, মাছিমপুর, কামালগড় ও দক্ষিণ সুরমার পিরোজপুর, শাহপরানসহ সিলেট নগরের অর্ধেকেরও বেশি এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে বাসাবাড়ি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বর ও নিচতলায় পানি জমেছে। ফলে রোগী, তাদের স্বজন ও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

শনিবার ভোর ৪টা ২৬ মিনিটে লাইভে এসে জলমগ্ন ঘরে নিজের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন সিসিকের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এলাকার অনেক জায়গায় পানি উঠেছে। আমি এলাকার মানুষকে দেখতে যেতে পারিনি, দুঃখিত। আমার নিজের বাসার পানি আর পানি। ঘরের কিছুই রক্ষা করতে পারছি না। আমি শুনেছি সমস্ত শহর জলাবদ্ধ।’

জলমগ্নতার জন্য তিনি নদী খননকে দায়ী করে বলেন, ‘আমাদের আন্তরিকতায় কমতি ছিল না। আপনারা জানেন নদী খনন হয়নি। সুরমা নদী যতক্ষণ খনন হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত এই অবস্থা থাকবে।’

লাইভে দেখা যায়, কাউন্সিলরের বসতবাড়ির আঙিনা কোমর পানিতে নিমগ্ন। বাসার ভেতরে হাঁটুপানিতে ডুবে আছে সকল আসবাব। বাড়ির লোকজন আসবাব ও মালামাল রক্ষায় পানির মধ্যে সেগুলো সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

একই চিত্র নগরের বিভিন্ন এলাকার। রায়নগর সোনারপাড়া রাসোস এলাকার বাসিন্দা আলোকচিত্রী ধ্রুব ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাতে বাসার উঠানে পানিতে ডুবে ছিল। ফজরের সময় পানি বাসারে ভেতরে প্রবেশ করে। অবশ্য বেলা ১১টার দিকে বাসার ভেতর থেকে পানি নেমে গেছে। তবে ঘরের আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি নোংরা পানি ঘরের অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে নগরের অনেক জায়গায় বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছিল। তবে বেলা ২টার পর থেকে বেশির ভাগ এলাকার পানি নেমে গেছে। অতিরিক্ত নিচু কিছু এলাকায় পানি থাকলেও তা কমতির দিকে।’

ড্রেন সম্প্রসারণসহ এত কাজের পরেও জলাবদ্ধতা কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আরবানাইজেশন হওয়ার কারণে ৯০ শতাংশ পানি রানিং অফ হয়, মানে পানি ড্রেন দিয়ে নেমে যেতে হয়। আর গ্রামীণ এলাকায় ৯০ শতাংশ পানিই মাটির ভেতর চলে যায়। এখন এই যে বিপুল পরিমাণ পানি নামতে গেলে কিছুটা সময় তো লাগে। যে কারণে পানি কিছুক্ষণ আবদ্ধ হয়ে থাকে। বৃষ্টি থামলে কিন্তু পানি বেশিক্ষণ থাকে না।’

স্পর্শকাতর ওসমানী হাসপাতাল এলাকায় জলাবদ্ধতা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওসমানী হাসপাতালে প্রায়ই জলাবদ্ধতা হয়। তাদের যে জেনারেটর কক্ষে সেখানে আসলে কী সমস্যা সেটা আমি বলতে পারছি না। একটু বৃষ্টি হলেই তাদের জেনারেটর রুমে পানি ঢুকে যায়।