কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উত্তরবঙ্গ সফরের তৃতীয় দিনে কুড়িগ্রামের মাঝপথ থেকেই ঢাকায় ফিরেছেন অন্তর্র্বতী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বৃহস্পতিবার সকালে তিনি নীলফামারী জেলা থেকে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের সফর স্থগিত করে ঢাকায় ফেরেন।
সরকারি সফরের অংশ হিসেবে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার চিলমারী ও শুক্রবার রাজারহাট উপজেলায় কম্বল বিতরণ করার কথা ছিল। কিন্তু কর্মসূচির মাঝপথেই কম্বল বিতরণ না করেই ফিরতে হয়েছে তাকে। তবে কুড়িগ্রামবাসীর জন্য তার বরাদ্দকৃত ১৮ হাজার কম্বল কবে বিতরণ করা হবে কিংবা কবে নাগাদ তিনি পুনরায় আসবেন তা জানাতে পারেনি স্থানীয় সরকার বিভাগ।
জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৯ উপজেলার ২৩ লাখ ২৯ হাজার ১৬১ জন মানুষের বিপরীতে প্রথম ধাপে ১ হাজার ৮০০টি কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা প্রতি উপজেলায় ২০০টি করে বরাদ্দ পায়। আর প্রতি উপজেলায় চাহিদা অনুযায়ী গরম কাপড় কেনার জন্য ৩ লাখ করে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা ৯ উপজেলার জন্য ২৭ লাখ টাকা।
এরপর দ্বিতীয় ধাপে চলতি মাসে ৯ উপজেলার জন্য ১০ হাজার কম্বল ও ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে, যা উপজেলা অনুযায়ী চাহিদা মোতাবেক বিতরণ করা হবে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সফরকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে আলাদা করে ৯ উপজেলার জন্য ২ হাজার করে ১৮ হাজার কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে চিলমারী ও রাজারহাট উপজেলার জন্য ৪ হাজার বরাদ্দ পাওয়া গেছে বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে আসবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সরকারিভাবে কম্বলের বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। কুড়িগ্রাম শীত-প্রবণ এলাকা। এ জেলায় প্রতিবছর শীত জেঁকে বসে। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় ৬ ইউনিয়ন মিলে লোকসংখ্যা ১ লাখ ২২ হাজার ৮৪১। এর মধ্যে সদরের চিলমারী ইউনিয়নেই প্রায় ৭ হাজার মানুষ রয়েছে। এ উপজেলায় চলতি শীত মৌসুমে মোট ৩ হাজার ২০০টি কম্বল বরাদ্দ মিলেছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৬ ইউনিয়নে ৩০টি করে মোট ১৮০ টি ও দ্বিতীয় ধাপে ২০০টি করে মোট ১২০০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ১ হাজার কম্বল মজুত রয়েছে। স্থানীয় সরকার থেকে উপদেষ্টার সফরকে ঘিরে ২ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলা হলেও মাঠ পর্যায়ে তা ভিন্নতা দেখা গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুজ কুমার বসাক বলেন, উপদেষ্টা মহোদয়ের সফরকে কেন্দ্র করে ১০টি কম্বল বিতরণ করে উদ্বোধন করা হতো। পরবর্তীতে তালিকা করে পর্যায়ক্রমে তা বিতরণ করা হতো। তবে জেলা পরিষদ থেকে ১ হাজার কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে, নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।
অন্যদিকে, রাজারহাট উপজেলায় সরকারিভাবে ২ লাখ ৩ হাজার ৪৫০ মানুষের বিপরীতে তিন দফায় মাত্র ১ হাজার ৬৫০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে প্রথম ধাপে ২০০টি, দ্বিতীয় ধাপে ৭৫০ এবং তৃতীয় ধাপে ৭০০টি করে মোট ১ হাজার ৬৫০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আরও ১ হাজার কম্বল পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার উপদেষ্টার উপস্থিতিতে ৭ ইউনিয়নের শীতার্ত মানুষের মাঝে বিতরণের কথা থাকলেও অনিবার্য কারণে কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।
জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, দ্বিতীয় ধাপে নতুন করে ৯ উপজেলার জন্য ১০ হাজার কম্বল ও ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে, যা চাহিদা অনুযায়ী বিতরণ চলমান।
জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা জানান, উপদেষ্টা মহোদয়ের আগমন উপলক্ষে জেলায় ১৮ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা পরবর্তী নির্দেশনা মতে দ্রুতই পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।