ময়মনসিংহ প্রতিনিধি:
বাজারে শাক-সবজির দামে অস্বস্তিতে ক্রেতারা। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সরাসরি কৃষক থেকে ভোক্তাপর্যায়ে ন্যায্যমূল্যে শাক-সবজি পৌঁছে দিতে উদ্যোগ নিয়েছেন ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের একদল শিক্ষার্থী। তাদের এ কার্যক্রম বেশ সাড়া ফেলেছে। সাশ্রয়ী দামে সবজি কিনতে শিক্ষার্থীদের দোকানে ভিড় করছে মানুষ।
সোমবার (২১ অক্টোবর) সকাল থেকে কলেজের মুক্তমঞ্চের সামনে ন্যায্যমূল্যে শাকসবজি বিক্রির এই কার্যক্রম শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।
আনন্দ মোহন কলেজের প্রধান ফটকের বিপরীত দিকেই বসানো হয় দোকান। সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে শামিয়ানা টানিয়ে দোকানটি চালানো হচ্ছে। টেবিলে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের সবজি।
নগরের বাউন্ডারি রোড এলাকার বাসিন্দা নিলুফার ইয়াসমীন (৫০) ফেসবুকে পোস্ট দেখে এখানে সবজি কিনতে আসেন। সবজি নিয়ে ব্যাগ ভরে বাসায় ফিরছিলেন।
তিনি বলেন, বাজারের চেয়ে সব সবজির দাম কম এখানে। আন্দোলনের পর কয়েকদিন সিন্ডিকেট না থাকায় বাজার সহনীয় ছিল। এখন আবার সবকিছুর দাম বেশি। শিক্ষার্থীরা এ কার্যক্রম চলমান রাখলে বাজারে জিনিসের দাম কমতে পারে।
শিক্ষার্থীদের ন্যায্যমূল্যের দোকানে ১৩ ধরনের সবজি মিলছে। স্থানীয় বাজার থেকে এই দোকানে কম দামে সবজি বিক্রি করেন তারা।
কাঁচামরিচ তাদের দোকানে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বাজারে ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কচুর লতি বিক্রি করা হচ্ছিল ৮০ টাকা কেজিতে, যা বাজারে ১০০-১২০ টাকা। ঢ্যাঁড়স ৭০ টাকা বিক্রি করলেও বাজারে ৮০-১০০ টাকা। লম্বা বেগুন ৮০ টাকায় বিক্রি করলেও বাজারে ১০০-১২০ টাকা কেজি। ছোট বেগুন ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি করলেও বাজারে নেওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি।
এছাড়া শসা ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন শিক্ষার্থীরা, যা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। পটোল ৮০ টাকা বিক্রি হলেও বাজারে ১০০ টাকা, আলু ৫৫ টাকা বিক্রি হলেও বাজারে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
আর লাউ প্রতিটি ৫৫-৬০ টাকা বিক্রি করছেন শিক্ষার্থীরা। ফুলকপি ২৫ টাকা, লাউশাক ও মুলা শাক ৩৫ টাকা আঁটি বিক্রি করছেন।
ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রি উদ্যোক্তাদের একজন আনোয়ার হোসেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ময়মনসিংহের সমন্বয়কও।
আনোয়ার বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের কাছ থেকে সবজি সংগ্রহ করায় কম দামে বিক্রি করতে পারছি। বাজারে আসা সবজি কৃষক থেক আসতে কয়েকটি হাতবদল হওয়ায় দাম বেড়ে যায়। কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে পরিবহন খরচ যোগ করে বিক্রি করেও বাজারের চেয়ে ২০-৩০ টাকা কমে সবকিছু বিক্রি করা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বর্তমান সরকার আসার পর সিন্ডিকেট এই সরকারকে বিতর্কিত করতে মূল্যবৃদ্ধি করে দিয়েছে। এতে ভোগান্তি হচ্ছে মানুষের। এজন্য শিক্ষার্থীরা কৃষক ও ভোক্তার সুবিধা করে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে। এতে কৃষক যেমন ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন, তেমনি ভোক্তাও কম দামে কিনতে পারছেন। বাজার যতদিন অস্থিতিশীল থাকবে, ততদিন আমাদের কার্যক্রম চলবে।
আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ বলেন, বর্তমানে উচ্চমূল্যে শাক-সবজি বিক্রি করে সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগীরা ফায়দা লুটছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্যমূল্যে সবজির বিক্রির উদ্যোগটির ফলে এটি নিরসন হবে অনেকটা। এমন উদ্যোগ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকবে।