করোনার মধ্যেও এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের পর দেশজুড়ে উৎসব তৈরি হয়েছে। কিছু সময়ের জন্য মানুষ মহামারি করোনার প্রকোপ ভুলে গেছেন। সন্তানের আনন্দে অভিভাবকরা মেতে উঠেছেন। কেউ কেউ আবার করোনার প্রদুর্ভাবের মধ্যেও সন্তানের ভালো ফলের খবর জানাতে স্বজনের বাড়িতে মিষ্টি বিতরণ করছেন।
রোববার (৩১ মে) এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। এবার গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ, যা গতবছর ছিল ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। এ বছর মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন, যা গত বছর পেয়েছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন।
ফলাফলে দেখা গেছে, এবার এসএসসি-সমমান পরীক্ষায় ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৮ জন শিক্ষার্থী চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়, তাদের মধ্যে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন পাস করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ করেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ফেসবুক লাইভে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
এ সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর পরীক্ষা শেষের ৬০ দিন পরে পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হলেও এবার করোনা ভাইরাসের কারণে তা বিলম্ব হয়েছে। তবে নকলমুক্ত পরিবেশে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ণের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আগেই একটি উত্তরপত্র প্রশিক্ষিত নিরীক্ষকদের বিতরণ করা হয়েছে। তার আলোকে শিক্ষকরা খাতা মূল্যায়ন করেছেন।
তিনি বলেন, এবার যারা পাস করতে পারেনি তারা মন খারাপ না করে আগামী বছর আবার পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। কষ্ট না পেয়ে পরবর্তীতে ভালো প্রস্তুতির মাধ্যমে ভালো ফলাফল করা সম্ভব হবে।
সাধারণ ৯ বোর্ডের ফল
এ বছর ৯টি সাধারণ বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ, মাদরাসা বোর্ডে ৮২ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং কারিগরি বোর্ডে ৭১ দশমিক ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮২ দশমিক ৩৪ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৬ হাজার ৪৭ জন, বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৪৮৩ জন, যশোর বোর্ডে পাসের হার ৮৭ দশমিক ৩১ শতাংশ জিপিএ-৫ ১৩ হাজার ৭৬৪ জন, রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৯০ দশমিক ৩৭ শতাংশ, জিপিএ-৫ ২৬ হাজার ১৬৭ জন, সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ২৬২ জন, দিনাজপুর বোর্ডে পাসের হার ৮২ শতাংশ ৭৩ শতাংশ, জিপিএ-৫ ১২ হাজার ৮৬ জন, ময়মনসিংহ বোর্ডে পাসের হার ৮০ দশমিক ১৩ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ৪৩৪ জন, কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার ৮৫ দশমিক ২২ শতাংশ, জিপিএ-৫ ১০ হাজার ২৫৪ জন পেয়েছে। আট বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও ১ লাখ ২৩ হাজার ৪৯৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
অন্যদিকে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের পাশের হার ৭২ দশমিক ৭০ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ৫১৬ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাশের হার ৮২ দশমিক ৫১ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৮৮৫ জন।
ফলে এগিয়ে ছাত্রীরা
এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মেয়েদের থেকে ছেলেরা বেশি অংশগ্রহণ করলেও পাসের হার ও সংখ্যা দুদিক থেকেই মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে।
এবারের পরীক্ষায় গড় পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তবে মেয়েদের পাসের হার ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশ। আর ছেলেদের পাসের হার ৮১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
সব শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি, দাখিল, এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় ১০ লাখ ২১ হাজার ৪৯০ জন ছাত্র অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে পাস করেছে ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৮৯২ জন। বিপরীতে ফেল করেছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫৯৮ জন।
অপরদিকে ১০ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৮ জন ছাত্রী এবারের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে পাস করেছে ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৬৩১ জন। আর ফেল করেছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৯০৭ জন। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে মাধ্যমিকের ফল ঘোষণা করা হচ্ছে বলে ফল প্রকাশের দিন কোনো অবস্থাতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমায়েত না হতে শিক্ষার্থীদের আগেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিদেশি কেন্দ্রের ফল
এবার দেশের বাহিরে ৯টি দেশে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩৩৬ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ৩১৮ জন পাস করেছে। পাসের হার ৯৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। শতভাগ পাস চারটি ও শতভাগ ফেল একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এবার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ফল পাঠানো হবে না। তাই ফল প্রকাশের দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অফিসও বন্ধ রাখতে বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ফল যেভাবে পাওয়া যাবে
অন্য বছরের মতো এবারও যেকোনো মোবাইল থেকে এসএমএস করে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল জানা যাবে। তবে ফল পেতে যারা প্রি-রেজিস্ট্রেশন করেছেন ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তারা এসএমএসে ফল পেয়েছেন।
ফল প্রকাশের পরেও যে কোনো মোবাইল থেকে এসএমএস করে ফল পাওয়া যাবে বলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক জানিয়েছেন।
এসএসসির ফল জানতে SSC লিখে একটি স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২০ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফল জানানো হবে।
দাখিলের ফল পেতে Dakhil লিখে স্পেস দিয়ে Mad লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২০ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠিতে হবে।
আর কারিগরি বোর্ডের এসএসসির ফল পেতে SSC লিখে একটি স্পেস দিয়ে Tec লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২০ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠালে ফিরতি এসএমএসে ফল জানানো হবে।
মোবাইলে এসএমএসের পাশাপাশি নিজ নিজ শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইট থেকেও ফল জানা যাবে।
এছাড়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) ই-মেইলে কেন্দ্র ও প্রতিষ্ঠানের ফল পাওয়া যাবে। প্রয়োজনে ডিসি ও ইউএনওর অফিস থেকে ফলাফলের হার্ডকপি সংগ্রহ করা যাবে।