করোনায় আক্রান্ত মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফনে বাধা
দেওয়া হয়নি গার্ড অব অনার
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সাজেদ উল্ল্যাহ’র লাশ দাফনে বাধা দিয়েছে গ্রামের বাসিন্দারা। এমনকি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দেওয়া ছাড়াই তাকে দাফন করা হয়েছে। জানাযায় উপস্থিত ছিলেন না প্রশাসনের কোন কর্মকর্তা। গ্রামবাসীর বাঁধা দেওয়ার পরবর্তীতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শেষ বিদায়ের বন্ধু’র সদস্যরা লাশের গোসল ও দাফনের ব্যবস্থা করেন।
জানা গেছে, মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার গ্রামের আবদুর রশীদ মুহুরী বাড়ির বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্ল্যাহ গত ৩০ জুলাই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তাঁর গেজেট নং ৫০৮৩, লাল বই নং ০২০৩০৪১২০৯। চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) দিবাগত রাতে তিনি ইন্তেকাল করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্ল্যাহ’র স্ত্রী লুৎফুর নাহার (৬৫) ও তার পরিবারের ৫ সদস্যও বর্তমানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। মৃত্যুর পর তাঁর ২ ছেলে চট্টগ্রাম থেকে লাশ দাফন কাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাড়ির লোকজন ও গ্রামবাসী বাধা দেয়। পরবর্তীতে তাঁরা মিরসরাই সদর ইউনিয়নের শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের কার্যালয়ে বাবার লাশ নিয়ে ভোর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। বুধবার (৪ আগস্ট) সকালে শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের কার্যালয়ে লাশের গোসল শেষে এ্যাম্বুলেন্সে করে কবরস্থানে লাশ নিয়ে যান। লাশ নেওয়ার পর গ্রামের মসজিদের ইমামও জানাযা দেওয়ার জন্য আসেননি।
মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্ল্যাহ’র ছেলে হোসেন মো. জাহাঙ্গীর বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাবার মৃত্যুর পর গ্রামের লোকজন লাশের গোসল করানো, কবরের মাটি খোঁড়া ও দাফন করতে পারবেনা বলে জানান। আমাদের বাড়ীর গালিব নামে একজন বাড়ির প্রবেশমুখে বাঁশ পুঁতে দেয়; যাতে এ্যাম্বুলেন্স বাড়িতে প্রবেশ করতে না পারে।
তিনি আরো বলেন, বুধবার সকাল ৬টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা’র বাসায় যাই বাবার মৃত্যুর খবরটি দেওয়ার জন্য। তিনি ঘুমে থাকায় দেখা করতে পারেননি। তবে নিরাপত্তা প্রহরীকে বাবার মৃত্যুর বিষয়টি অবহিত করে এসেছি। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবির আহমেদকে মোবাইলে বাবার মৃত্যু ও জানাযার সময় সকাল ৯টায় নির্ধারণের বিষয়টি জানাই। তিনি গার্ড অব অনারের বিষয়ে ইউএনওকে জানাবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবির আহমেদ বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজেদ উল্ল্যাহ’র লাশ দাফনের জন্য সকাল ১০টায় সময় নির্ধারণ করার কথা বলা হলেও তাঁর পরিবারের লোকজন সকাল ৯টায় তাড়াহুড়ো করে দাফন করে ফেলে। ফলে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজেদ উল্ল্যাহকে গার্ড অব অনার দেওয়ার জন্য সকাল ১০টায় সময় নির্ধারণ করা হয়। উনার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় পরিবারের লোকজন তাড়াতাড়ি করে সকাল ৯টায় দাফন করে শহরে চলে যায়। সেজন্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দেওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, লাশ দাফনে গ্রামবাসী বাঁধা দেওয়ার বিষয়টি আমি শুনিনি; এটি জানলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নিতাম।