কর্ণফুলী প্রতিনিধি:
কর্ণফুলী উপজেলার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অপসারণে জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের আঙুল উঠেছে বিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের তোলা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গঠিত তদন্ত কমিটিতে ভুয়া অভিভাবক প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত হন এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রশ্ন উঠেছে, প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটিতে কীভাবে একজন ভুয়া ব্যক্তি যুক্ত হতে পারলেন এবং কারা এ ঘটনার পেছনে আছেন।
জানা গেছে, ২০ আগস্ট কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের আছিয়া মোতালেব রিজিয়া নাছরিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বিদ্যালয়ের সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। প্রধান শিক্ষক সোহেল মাহমুদ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে সাত দিনের সময় চান এবং বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজ শুরু করেন। তবে ২৭ আগস্ট হঠাৎ করে শিক্ষার্থীরা আবারও ক্লাস বর্জন করে এবং প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে। এ সময় বহিরাগত ব্যক্তিরা শিক্ষার্থীদের প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে।
২৮ আগস্ট শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ করে তাকে বরখাস্তের দাবি জানায়। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১ সেপ্টেম্বর ইউএনও মাসুমা জান্নাত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় গাউসিয়া সিরাজুল মনির দাখিল মাদ্রাসার সুপার সিরাজুল মুস্তাফা মনিরকে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হিসেবে ছিলেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শিরিন আকতার ও ভুয়া অভিভাবক প্রতিনিধি কায়সার আহমদ।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাবুল নাথ বলেন, ‘তদন্ত কমিটির দুই সদস্যের বৈধতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। শিক্ষিকা শিরিন আকতারের প্রস্তাবে কায়সার আহমদ (ইসমাঈল হোসেন) অভিভাবক প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত হন, যা সম্পূর্ণ অনিয়ম। শিক্ষিকা শিরিন আকতারের নিয়োগেরও কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই।’
মঙ্গলবার ইউএনও কার্যালয়ে তদন্ত কমিটি ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় কায়সার আহমদ পরিচয় দেওয়া ইসমাঈল হোসেনের বয়স নিয়ে সন্দেহ হলে ইউএনও তার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখতে চান। জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, তিনি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। এ বিষয়ে ইউএনও মাসুমা জান্নাত বলেন, ‘তদন্ত কমিটিতে জালিয়াতির মাধ্যমে যুক্ত হওয়ার ঘটনায় ওই ব্যক্তি ক্ষমা প্রার্থনা করে মুচলেকা দিয়েছেন। তার নাম প্রস্তাবকারী শিক্ষিকা শিরিন আকতারও ভুল স্বীকার করে লিখিত দেন।’
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সিরাজুল মুস্তাফা মনির বলেন, ‘আমাকে আহ্বায়ক এবং একজন শিক্ষিকা ও অভিভাবক প্রতিনিধিকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পরে জেনেছি অভিভাবক প্রতিনিধি পরিচয়ে যিনি কমিটির সদস্য হয়েছিলেন তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন। এ ছাড়াও অপর শিক্ষিকার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশ নিতেও তাদের মদত দিতে দেখা যায়; যা তদন্ত কমিটির একজন নিরপেক্ষ সদস্য হিসেবে তিনি করতে পারেন না।’
ইসমাঈল হোসেন জালিয়াতির ঘটনায় লিখিত বক্তব্যে জানান, শিক্ষিকা শিরিন আকতারসহ কয়েকজনের পরিকল্পনাতেই তিনি এ কাজ করেছেন। শুনানিকালে তিনি নিজেকে বিবাহিত এবং কায়সার আহমদকে ছোট ভাই হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, তিনি অবিবাহিত এবং তার পিতার নাম আবুল বাশার। অন্যদিকে কায়সার আহমদ লিখিত মুচলেকায় উল্লেখ করেন, নাম ও পদবি ব্যবহার করে কমিটিতে তার ভাই যুক্ত হয়েছে, অথচ এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এদিকে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় তিনি ইসমাঈলের বড় ভাই নন, তার পিতার নাম নূর নবী এবং তিনি কোনো অভিভাবক প্রতিনিধিও নন। বিদ্যালয়ের প্রকৃত অভিভাবক প্রতিনিধি সৈয়দ শোয়াইব, যিনি প্রবাসে থাকার কারণে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একই শুনানিতে যুক্ত হন।
অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষকের ইন্ধনে কিছু নিয়োগবিহীন শিক্ষক তাদের ‘কাছেরথ শিক্ষার্থীদের প্ররোচিত করে প্রধান শিক্ষক সোহেল মাহমুদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। প্রধান শিক্ষক সোহেল মাহমুদ বলেন, ুসাবেক প্রধান শিক্ষকের ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের উসকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে, সবকিছুর জবাব দিতে আমি প্রস্তুত। আমি প্রশাসনের প্রতি শতভাগ আস্থাশীল।’
ইউএনও মাসুমা জান্নাত বলেন, জালিয়াতির ঘটনায় অভিযুক্তরা ক্ষমা চেয়ে লিখিত দিয়েছেন। পূর্বের কমিটি বিতর্কিত ও প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠায় আপাতত তদন্ত প্রতিবেদন ও কমিটি স্থগিত রাখা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র সরকারকে আহ্বায়ক করে ও সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দ্বিজেন ধর ও উপ সহকারী প্রকৌশলী (জনস্বাস্থ্য) নাজিম উদ্দীন রাসেলকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। চলতি মাসের ১৫ তারিখ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।