‘কসম’ সংগ্রহে হুড়োহুড়ি

প্রকাশিত: ৩:০৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৩, ২০২৫

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি:

 

নান্দাইল উপজেলার নরসুন্দা নদী খনন কাজে পাওয়া যায় এক ধরনের কালো মাটি। স্থানীয়দের কাছে যা ‘কসম’ নামে পরিচিত। রান্নাবান্নায় বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায় বলে নদীতীরের বাসিন্দাদের কসম সংগ্রহে হুড়োহুড়ি চলছে।

‘কসম’ এক ধরনের কালো মাটি, যা প্রাচীন কোনো জলাশয়, নদীর তীর বা তলদেশে পাওয়া যায়। সাধারণ মাটি থেকে কসম একটু কালো এবং ওজনে হালকা। এ মাটি রোদে শুকিয়ে সারাবছর রান্নাবান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নান্দাইলের নরসুন্দা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি এবং সারাবছর নৌ চলাচল সুবিধা রক্ষায় নদীটির ২৩ কিলোমিটার খননের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ২০ দিন আগে ১৩টি খননযন্ত্র (ভেকু) দিয়ে উপজেলার পূর্ব সীমানা চংভাদেড়া গ্রামে নদী খনন শুরু হয়। খননকাজ এগিয়ে কালিগঞ্জ বাজার পার হয়ে শুভখিলা রেল সেতু পর্যন্ত এসেছে। খনন করতে গিয়ে নদীর কাদামাটির নিচে বা পাশে এক ধরনের হালকা কালো মাটি পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা সে মাটি সংগ্রহের জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করে দিয়েছে। কে কার আগে বেশি সংগ্রহ করবে তা নিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলছে প্রতিযোগিতা।

গত মঙ্গলবার কালিগঞ্জ বাজারের কাছে এবং শুভখিলা গ্রামে রেল সেতুর নিচে গিয়ে দেখা যায় খনন কাজ চলছে। খনন যন্ত্রের আশপাশে দুই পারের বিভিন্ন বয়সের লোক কোদাল, শাবল নিয়ে যে যেভাবে পারছে কসম সংগ্রহ করছে। তাদের কারও হাতে বস্তা বা কারও হাতে বড় গামলা বা খাদি। সেসব ভরে ভরে মাটি পারে নিয়ে জমা করছে। কেউ কেউ আবার নদীর মাটির নিচে পাওয়া অর্ধপচা প্রকাণ্ড গাছের গুঁড়ি কেটে কেটে লাকড়ি সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত।

কসম সংগ্রহে আসা কয়েকজন জানান, বেশ কয়েক বছর আগে এখানে নদীর তীরে কালো মাটি পাওয়া গিয়েছিল। কৌতূহলবশত সে মাটি শুকিয়ে দেখা যায় ভালো জ্বলে। মাঝখানে আর সে মাটি পাওয়া যায়নি বলে ব্যবহারও করা যায়নি। নদী খনন করতে গিয়ে এখন সে মাটির সন্ধান পাওয়া গেছে।

বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক এবং শুভখিলা গ্রামের শামছুল হক জানান, বাপ-দাদার কাছে শুনেছেন, বড় বড় গাছপালা নদীর মাটির নিচে চাপা পড়ে এ ধরনের কালো মাটিতে পরিণত হয়েছে। শুদ্ধ ভাষায় এ মাটিকে জীবাশ্ম জ্বালানি বলা হলেও স্থানীয়ভাবে নাম দিয়েছেন কসম। রান্নাবান্নায় কসম যে কোনো লাকড়ি বা গ্যাসের চেয়েও বেশি জ্বলে, রান্নাও হয় দ্রুত। দু-একটি টুকরো দিয়েই সব রান্না হয়ে যায়।

নরেন্দ্রপুরের হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কসম’ সাধারণ মাটির মতোই, তবে একটু কালো ও নরম। সংগ্রহের পর টুকরা টুকরা করে ১৫ থেকে ২০ দিন রোদে শুকাতে হয়। এরপর সারাবছর রান্নার জন্য জ্বালানি হিসেবে মজুত রাখা হয়।

কালিগঞ্জ বাজারের কাছের বাসিন্দা দিগেন্দ্র জানান, নদীতীরের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দা এ মাটি সংগ্রহ করছেন। তিনিও ঝালমুড়ি বিক্রির ব্যবসা বন্ধ রেখে কয়েক দিন ধরে কসম সংগ্রহ করছেন। যে পরিমাণ কসম সংগ্রহ করেছেন তাতে আগামী ৪ মাস তাঁর জ্বালানি খাতে কোনো টাকা খরচ করতে হবে না।

রিপা রানী নামে একজন বলেন, ‘স্বামীকে নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে এ মাটি সংগ্রহ করছি। এখন আর শরীরে দিচ্ছে না, না হলে সারাবছরের জ্বালানির সমস্যা মিটে যেত।’

কথা হয় রাজগাতী ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার মমতাজ খোকনের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, মাটি সংগ্রহে নদীতীরের বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসব বিরাজ করছে। বিশেষ করে অসচ্ছল পরিবারগুলোর জন্য এটি দারুণ সুযোগ।

নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার বলেন, ‘এ ধরনের মাটি পাওয়া গেলে খুবই ভালো একটি খবর। আমরা যত বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করতে পারব, ততই আমাদের বনাঞ্চল সংরক্ষিত থাকবে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’