কিশোরগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে নিহত ২

প্রকাশিত: ৫:২২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০২৩

 কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকালে উপজেলার ছয়সূতি এলাকায় এ সংঘর্ষে ১৫ পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। নিহত দুজন হলেন- কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতি ইউনিয়নের বড় ছয়সূতি এলাকার চা দোকানি কাউছার মিয়ার ছেলে ও চার নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সহ-সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ (২২) এবং একই ইউনিয়নের মাধবদী এলাকার কাজল মিয়ার ছেলে ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড কৃষক দলের সদস্য বিল্লাল হোসেন (৩০)। আজ দুপুরের দিকে নিউজ পোস্টকে এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ ও স্থানীয়রা।


স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল থেকে বিএনপির ডাকা তিনদিনের অবরোধ শুরু হয়েছে। সকাল ৯টার দিকে কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নে আঞ্চলিক সড়কে অবস্থান নেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পুলিশ বাধা দিলেও সড়কে মিছিল করেন তারা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে কৃষক দল নেতা বিল্লাল হোসেন ও ছাত্রদল নেতা রেফায়েত উল্লাহ নিহত হন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম ঘটনাস্থল থেকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অবরোধের প্রথম দিনে আজ সকালে ছয়সূতি ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নিয়ে উপজেলার ছয়সূতি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যাওয়ামাত্র আগে থেকে অবস্থান নেওয়া পুলিশ সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে ছয়সূতি ইউনিয়নের কৃষক দলের সভাপতি বিল্লাল হোসেন ও ছাত্রদল নেতা রেফায়েত উল্লাহ মারা যান।


নিহত বিল্লালের মা নাজমা বেগম বলেন, আমার ছেলে বিল্লাল ঘুম থেকে উঠে সকালেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। কিছু সময় পরই শুনলাম ছয়সূতি বাসস্ট্যান্ডে বিএনপির মিছিলে নাকি পুলিশ গুলি চালাইছে। সেই গুলিতে নাকি আমার ছেলে মারা গেছে। এ খবর শুনে বাড়ি থেকে দৌড়ে গিয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আমার সন্তানের রক্তাক্ত মরদেহ দেখে কোলে তুলে নেই। আমার কাছ থেকে ছেলের মরদেহ পুলিশ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আমার ছেলেকে পুলিশ গুলি করে মেরে ফেলেছে। আমার ছেলে হত্যাকারীদের বিচার চাই।
নিহত বিল্লালের স্ত্রী আন্না বেগম বলেন, খুব সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান আমার স্বামী। পরে লোকজন দৌড়ে এসে বললো মিছিলে নাকি আমার স্বামীরে পুলিশ গুলি করে মেরেছে। গিয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে নিহত রেফায়েত উল্লাহর বাবা চায়ের দোকানি কাউছার মিয়া বলেন, খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ছয়সূতি বাসস্ট্যান্ডে যায় আমার ছেলে। সেখানে সে মিছিল দেখতে গিয়েছিল। হঠাৎ পুলিশ সেই মিছিলে গুলি চালালে ছেলেটা মারা যায়। আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই।


নিহত রেফায়েত উল্লাহর ফুফু ফারজানা বেগম বলেন, পুলিশ নাকি জনগণের বন্ধু। কিন্তু সেই পুলিশের হাতেই আমার ভাতিজার প্রাণ গেলো। এখন আমরা জনগণ কার কাছে ভাতিজার বিচার চামু।
ভাগলপুর জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রোকন উদ্দীন বলেন, আমাদের হাসপাতালে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। তার নাম রেফায়েত উল্লাহ। বয়স ২০ বছর। তার বাড়ি উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়ন বড় ছয়সূতী গ্রামে।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. কামরুল হাসান নিউজ পোস্টকে বলেন, বিল্লাল হোসেন (৩০) নামে একজনের মরদেহ হাসপাতালে এনেছে পুলিশ। এছাড়া একজন আহত ব্যক্তিকেও আনা হয়েছে।


এ বিষয়ে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. গোলাম মোস্তফা নিউজ পোস্টকে বলেন, আজ সকালে বিএনপির সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ঘটেছে। এ সময় পুলিশকে মারতে এলে তখন আত্মরক্ষায় গুলি ছুড়লে দুজন নিহত হওয়ার খবর শুনেছি।


পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, অবরোধকারীরা রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করলে পুলিশ তাদের সরানোর চেষ্টা করে। এ সময় তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে পুলিশের সাথে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এছাড়া ছয়সূতি ইউনিয়নের কৃষক দলের সভাপতি বিল্লাল হোসেন নামে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, রেফায়েত উল্লাহ নামের ওই যুবক কীভাবে নিহত হয়েছেন তা এখনো বলা যাচ্ছে না। পরবর্তীতে বিস্তারিত জানা যাবে। তাদের মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে এলাকায় চরম উত্তেজনা ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিপুলসংখ্যাক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, কুলিয়ারচরে সংঘর্ষে দুজন নিহত হওয়ার খবর আমরা জানতে পেরেছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।