কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
খরা, অতিবৃষ্টি ও বন্যা কুড়িগ্রামের কৃষিতে মারাত্মক আঘাত হেনেছে। পাট, আমন বীজতলা, শাকসবজি ও আউশসহ বিভিন্ন ফসলের হাজার হাজার হেক্টর জমির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের পাটের আবাদ। জেলায় এবার কৃষিতে ১০৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যার অর্থেকেরও বেশি পাটে।
ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও জিঞ্জিরাম এই পাঁচ আন্তঃসীমান্ত নদীসহ ১৬ নদ নদীর জেলা কুড়িগ্রাম। যার ফলে বন্যাসহ নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখানে লেগেই থাকে। এবার এপ্রিল ও মে মাসে বৃষ্টি হয়নি। এরপর পুরো জুন মাস ধরে অতিবৃষ্টি হয়েছে। যার পরিমাণ ১ হাজার ১০০ মিলিমিটার বলে জানিয়েছে রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিস। জুলাইয়ের প্রথম থেকে শুরু হয়েছে বন্যা। দুই সপ্তাহ ধরে বন্যা চললেও এখন পর্যন্ত নিম্নাঞ্চল থেকে পুরোপুরি পানি সরে যায়নি।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ১৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও খরার কারণে তা অর্জিত হয়নি। আবাদ হয়েছে ১৭ হাজার ২৫৬ হেক্টর জমিতে। এরপর অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ২ হাজার ৮৮৪ হেক্টর জমির পাট সব নষ্ট হয়ে গেছে।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ও পাঁচগাছী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, পানিতে ডুবে থাকায় অনেক জমির পাট গাছ মরে গেছে। চাষিরা সেই পাট গাছ কেটে এনে পাটখড়ি হিসেবে ব্যবহারের জন্য শুকাচ্ছেন। কিছু কিছু চাষি পাট জাগ দিয়ে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। তবে যেসব ক্ষেত থেকে পাট পাওয়া গেছে তার উৎপাদন ও মান ভালো হয়নি। ফলে লাভ তো দূরে থাক আবাদ খরচ তোলা নিয়ে দুঃশ্চিতায় পড়েছেন পাট চাষিরা।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের ধরলার পাড় এলাকার রব্বানী নামের একজন বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে পাট কাটা হতো। এর মধ্যে বন্যায় পাট তলিয়ে সব গাছ মরে গেছে। এখন খড়ি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাই পাট কেটে শুকাচ্ছি।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা মো. মামুনুর রহমান বলেন, জেলায় এবার ২১ হাজার ৩৪৬ জন কৃষকের ১০ হাজার ২৪০ মেট্রিকটন পাট উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা প্রায় ৫৬ কোটি টাকার মতো বলে জানিয়েন তিনি।
তিনি আরও বলেন, নিম্নাঞ্চল থেকে বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে রোপা আমন আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি দেরিতে নামলে আগাম রবি ফসল আবাদের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।