কুমারখালীতে আজও খোলা হয়নি সেই ইউনিয়ন পরিষদ, ভোগান্তি চরমে

প্রকাশিত: ১২:২৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৬, ২০২৫

 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:

 

ঘড়ির কাটায় সকাল ১১টা। টাঙানো হয়নি পতাকা। প্রধান ফটকে ঝুলছে তালা। আসেনি চেয়ারম্যান, সচিব বা মেম্বরদের কেউ। কয়েকজন গ্রামপুলিশ বসে আছেন। আর ফিরে যাচ্ছেন সেবা প্রত্যাশীরা। আজ সোমবার কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ৮ নম্বর যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদে সরেজমিন গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবা প্রত্যাশীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামপুলিশ বলেন, গতকাল রোববার দুপুরে বিএনপির নেতাকর্মীরা তালা লাগিয়েছেন। সন্ধ্যায় নেতারাই পতাকা খুলে নিয়ে গেছে। আর আজ সকালে কার্যালয় বন্ধ দেখে সচিব চলে গেছেন। জনগণ এসে ফিরে যাচ্ছেন।

ফোনে যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব রেজাউল ইসলাম বলেন, সকালে গিয়ে দেখি কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। পরে ইউএনও কার্যালয়ে এসেছি বিষয়টি জানাতে। তার ভাষ্য, গত শনিবার রাতে পরিষদ চত্বরে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ৭৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেজন্য রোববার দুপুরে পরিষদের প্রধান ফটক ও চেয়ারম্যান কার্যালয়ের তালা লাগিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গত শনিবার রাত ৮টার দিকে যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ছাত্রলীগের ৭৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে কেক কেটে বিভিন্ন শ্লোগান দেওয়া হয়। ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার নেতৃত্বে এই কেক কাটা হয়। পরে কেক কাটার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এর প্রতিবাদে ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা রাত ৯টার দিকে চেয়ারম্যান কার্যালয়ে তালা দেন।

এরপর রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে যদুবয়রা জয়বাংলা বাজার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল যদুবয়রা পশুহাটের টোলঘরে ভাঙচুর করে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যায়। সেখানে পরিষদ থেকে সচিব, গ্রামপুলিশ ও সেবাপ্রত্যাশীদের বের করে দিয়ে এবং পরিষদ ভবনের প্রধান ফটকের গেটে তালা লাগিয়ে দেন নেতাকর্মীরা।

এসময় যদুবয়রা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম আসাদ, ইউনিয়নের যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর মেম্বর আনিছুর রহমান, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বর আব্দুল মালেক, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি প্রান্ত ও সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলামসহ শতাধিক নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সোমবার সকালে দুই শিশু বাচ্চা নিয়ে পরিষদে সেবা নিতে এসেছেন ইউনিয়নের বিলকাটিয়া গ্রামের আলিফ হোসেনের স্ত্রী বন্যা খাতুন। তিনি সমকালকে বলেন, স্কুলে ভর্তির জন্য বাচ্চার জন্মনিবন্ধন করা জরুরি। গতকাল এসে ফিরে গেছি। আজও ফিরে গেলাম। মানুষের কষ্ট দেখার কেউ নাই।

এ সময় কেশবপুর গ্রামের যুবক মো. সিজান বলেন, পাসপোর্ট করার জন্য চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র দরকার। গত রোববার দুপুরে এসেছিলাম। সেসময় অনেক লোকজন এসে সবাইকে বের করে দিল। আজও কার্যালয় বন্ধ।

পরিষদে তালা লাগানো ও হাটের টোল ফ্রি করার ঘটনা স্বীকার করেছেন যদুবয়রা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম আসাদ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর ও দেশদ্রোহীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত পরিষদের তালা খোলা হবে না। হাটে কেউ টোল তুলতে পারবে না। এতে কিছুদিন জনগণের হয়রানি হবে। তবুও দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই দেওয়া হবে না।

যদুবয়রা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ফোনে বলেন, বিএনপির লোকজন পরিষদে তালা দিয়েছেন। সেজন্য সেবা থেকে বঞ্চিত মানুষ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, দ্রুত সেবা চালুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।