কুমিল্লায় রায় পক্ষে না যাওয়ায় সালিশকারীকে হত্যা: ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন ১০

প্রকাশিত: ৫:০২ অপরাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২৪

কুমিল্লা প্রতিনিধি:

সালিশের রায় পক্ষে না যাওয়ায় কুমিল্লায় নুরুল হক নামে এক সালিশকারীকে হত্যার ঘটনায় ছয় জনের মৃত্যুদণ্ড ও ১০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার (২৬ জুন) কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এই রায় দেন। এ সময় দণ্ডপ্রাপ্ত সকলকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ জাকির হোসেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন মাছুম (৩৫), তাজুল ইসলাম (৩২), মোস্তফা (২৪), কাইয়ুম (২৫), কাইয়ুম (২৮) ও তবদুল হোসেন (৪০)। রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন কাইয়ুম ও তবদুল হোসেন (৪০)।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন নানু মিয়া (৪০), মতিন মিয়া (৪০), সাইদুল ইসলাম (২৪), বাবুল মিয়া (২৫), সফিকুল ইসলাম (৩৫), সফিকুল ইসলাম (২৮), মোসলেম মিয়া (৪৫), হেলাল মিয়া (২৫), বিল্লাল হোসেন (৩০) ও আবদুল আউয়াল (৩০)।

রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন নানু মিয়া (৪০), মতিন মিয়া (৪০), বাবুল মিয়া (২৫), সফিকুল ইসলাম (৩৫), সফিকুল ইসলাম (২৮), মোসলেম মিয়া (৪৫), হেলাল মিয়া (২৫) ও আবদুল আউয়াল (৩০)।

রায়ে দুই জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন হিরণ মিয়া ও মনিরুল ইসলাম। এ ছাড়া বিচারের সময়কালে ফুল মিয়া ও সেলিম নামের দুই আসামির মৃত্যু হলে আদালত তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেন।

আইনজীবী মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানান, নুরুল হক হত্যা মামলার এজাহারে মোট ২২ জন নামীয় ও অজ্ঞাত ১২ জন আসামি ছিল। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট প্রদান করেন। মামলার বিচার চলাকালীন সময়ে দুই আসামি মারা যায়। দুই জনকে খালাস প্রদান করেছেন বিচারক। রায় প্রদানের সময় আদালতের এজলাসে ১০ জন আসামি উপস্থিত ছিলেন। অপর ৬ আসামি পলাতক রয়েছেন। এ মামলায় মোট ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণপাড়া ছোট দুশিয়া এলাকার স্থানীয় সালিশকারী হাজি নুরুল হককে সালিশে এক পক্ষে রায় না দেওয়ায় হত্যা করা হয়। জানা গেছে, স্থানীয় ফরিদ মিয়ার সঙ্গে আরেক স্থানীয় মাছুমের দীর্ঘদিনের সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ ছিল। এ ঘটনার নুরুল হকের নেতৃত্বে কয়েকবার সালিশ হয়। সালিশ দরবারের বৈঠকে ফরিদ মিয়ার দখলকৃত ভিটিবাড়ি মাছুম মিয়ার দখল থেকে ফরিদ মিয়াকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য রায় দেন তিনি। এরপর থেকেই আসামিরা ক্ষোভে বিভিন্ন সময়ে তাকে ভয়ভীতিসহ হুমকি দিচ্ছিল। এ ঘটনার পর তিনি কুমিল্লা থেকে বাড়ি ফেরার পথে সবজুপাড়া শিদলাই রোড এলাকায় আসলে মাছুমের পক্ষের লোকজন তাকে হামলা করে। মাছুমের হাতে থাকা লোহার বল্লম দিয়ে তার বুকে পরপর চারটি আঘাত করে। এ ছাড়াও ঘটনাস্থলে উপস্থিত মাছুমের পক্ষের লোকজন তাকে অতর্কিত হামলা করে তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনার পর নুরুল হকের ছেলে মো. শরিফুল ইসলাম ব্রাহ্মণপাড়া থানায় বাবা হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করেন। দীর্ঘ ১৩ বছর পর আজ (বুধবার) মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।