আফরিন আক্তারঃ
গ্রীষ্মের শুরুতেই বিশাল ক্যাম্পাস যেন লাল রঙে ছেয়ে গেছে। যা দেখে মনে হয় এ যেন কৃষ্ণচূড়ার এক বৃহৎ আড্ডা স্থল। সূর্যের সবটুকু উত্তাপ কেড়ে নিয়েছে টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া। প্রখর রোদে পুড়ে জানান দিচ্ছে তার সৌন্দর্যের বার্তা। প্রকৃতিতে নীল আকাশের ক্যানভাসে জ্বলছে গাঢ় রক্তিম রঙ, এ যেন লাল রঙের এক মায়াবী ক্যানভাস। এমনই নয়নাভিরাম কৃষ্ণচূড়া ফুলের মায়ায় জড়িয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
কৃষ্ণচূড়ার তাৎপর্য বুঝাতে তাইতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গেয়েছেন, ‘গন্ধে উদাস হাওয়ার মতো উড়ে তোমার উত্তরী কর্ণে, তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরী’।কৃষ্ণচূড়া ফুলের বর্ণ-বৈচিত্র্য লক্ষণীয়। গাঢ় লাল, লাল, কমলা, হলুদ এবং হালকা হলুদের এক দীর্ঘ বর্ণালীতে বিস্তৃত এর পাপড়ির রঙ। প্রথম ফোটার উচ্ছ্বাস আস্তে আস্তে স্তিমিত হয়ে এলেও বর্ষার শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণচূড়ার গাছ থেকে ফুলের রেশ হারিয়ে যায় না। শুধু ফুল নয়, পাতার ঐশ্বর্যেও কৃষ্ণচূড়া অনন্য। এই পাতার সবুজ রঙ এবং সূক্ষ্ম আকৃতি অতিশয় আকর্ষণীয়।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু অ্যাকাডেমিক ভবন, পশ্চিমপাড়া এলাকায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল, পরিবহণ মার্কেটে এনামুল ভাইয়ের চায়ের দোকানের উপরে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, পূর্বপাড়া মসজিদের সামনের রাস্তার ধারে, বধ্যভূমি এলাকার পুকুর পাড়ে এবং চারুকলা চত্বরসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় রঙ ছড়াচ্ছে চোখ জুড়ানো কৃষ্ণচূড়া।
কৃষ্ণচূড়া মূলত লাল রঙে দেখতে হলেও উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া তিন রঙের হয়ে থাকে। লাল, হলুদ ও সাদা। এটি একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া (উবষড়হরী ৎবমরধ)। ফ্যাবেসি (ঋধনধপবধব) পরিবারের অন্তর্গত এই বৃক্ষটি গুলমোহর নামেও পরিচিত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চলব্যাপী ছড়ায়। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। যা প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। ভারতবর্ষে এপ্রিল-জুন সময়কালে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটলেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় ভিন্ন।
কৃষ্ণচূড়ার এই রক্তিম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী সূচনা দাস চমক ফেসবুকে লিখেছেন, হলে আমার রুমের জানালা থেকে এই কৃষ্ণচূড়া গাছটা একদম সামনেই দেখা যায়। সে দাঁড়িয়ে আছে তার অপার মুগ্ধতা নিয়ে। প্রতিদিন সকালে উঠে যখন রক্তরঙা কৃষ্ণচূড়াকে দেখি। মনে হয় যেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের কাছে হার মেনে যায় জীবনের সকল হতাশা। পৃথিবীটা কৃষ্ণচূড়ার হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনিয়া আক্তার বলেন, এই খটখটে রুক্ষ আবহাওয়ার মধ্যেও যেন এক নয়নাভিরাম বার্তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে হাজির কৃষ্ণচূড়া। এর নজরকাড়া লাল পাপড়ির সৌন্দর্য ক্যাম্পাসের ক্লান্তিমাখা রূপে প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে যেন কৃষ্ণচূড়া আর ভালোবাসা একই সুতোয় গাঁথা। যার লালিমার ঝলক ছড়িয়ে পড়েছে সবার মাঝে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনিম তাবাচ্ছুম বলেন, ফুল পছন্দ নয় এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়। এর মধ্যে কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রায় সকলেরই পছন্দের। ক্যাম্পাসে পড়াশোনার ব্যস্ততায় শত ক্লান্তিতেও কৃষ্ণচূড়ার রঙিন সৌন্দর্যে মুহূর্তেই মন ভালো হয়ে যায়। প্রেমময় এই ঋতুতে কৃষ্ণচূড়া ফুল যেন অপরূপ এক সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুল আরিফিন খান বলেন, এই গ্রীষ্মে কৃষ্ণচূড়া ফুল ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমার মতে কৃষ্ণচূড়া হচ্ছে প্রেমের এক জলজ্যান্ত প্রতীক যা ক্যাম্পাসের সকল প্রেমিককে এক অন্যরকম বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে। বেঁচে থাকুক প্রেম, ফুটে থাকুক কৃষ্ণচূড়া।