কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পঙ্কজ ভট্টাচার্যের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন

প্রকাশিত: ১০:৫৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৫, ২০২৩

প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ঐক্য ন্যাপের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্যের প্রতি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার ভক্ত, শুভানুধ্যায়ী, সহযোদ্ধা, বন্ধু, স্বজনসহ সর্বস্তরের মানুষ। শহীদ মিনারে তাকে জানানো হয় ফুলেল শ্রদ্ধা ও রাষ্ট্রীয় সম্মান।
সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আজ বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালের হিমঘর থেকে পঙ্কজ ভট্টাচার্যের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা পঙ্কজ ভট্টাচার্যের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসার পর ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হেদায়েতুল ইসলামের নেতৃত্বে ঢাকা জেলা প্রশাসন তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান (গার্ড অব অনার) প্রদান করে। এ সময় ডিএমপির একটি চৌকষ দল বিউগলে করুণ সুর তোলে।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, লোভ-লালসার উর্ধ্বে থাকা আজীবন সংগ্রামী রাজনীতিবিদ, যিনি পদ-পদবীর পেছনে ছোটেননি, রাজনীতিকে ব্রত হিসেবেই নিয়েছিলেন, সেই মানুষটি পঙ্কজ ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, পঙ্কজ ভট্টাচার্য ভাষাসংগ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধ, সব গণআন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন, স্বাধীনতার পরও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। তার মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন শূণ্যতা তৈরি হয়েছে, তেমনি তার জীবন ও রাজনৈতিক জীবন থেকে আমাদের অনেক শেখার রয়েছে।
হাছান মাহমুদ এ সময় পঙ্কজ ভট্টাচার্যের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন ও তার শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এ ছাড়া সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ ও নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এরপর ঐক্য ন্যাপের সভাপতি ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক পঙ্কজ ভট্টাচার্যের প্রতি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে থাকেন সর্বস্তরের মানুষ। ঐক্য ন্যাপের আয়োজনে এই শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বটি চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। পরে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পোস্তগোলার মহাশ্মশানে। সেখানে তার শেষকৃত্য হবে।
রোববার রাতে রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য ১৯৩৯ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার শিক্ষাজীবন কেটেছে চট্টগ্রাম ও ঢাকায়। ওই সময় ছাত্র রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তার ভূমিকার পাশাপাশি তিনি একজন ভালো ফুটবলার এবং সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবেও প্রশংসিত হন। পঙ্কজ ভট্টাচার্য ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের প্রত্যক্ষ সাক্ষী ও এসব আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী শাসনের পতনের প্রাক্কালে, তিনি দেশের রাজনৈতিক গতিপথের রূপরেখা দিয়ে তিন-রাজনৈতিক জোটের রূপরেখা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও পরে কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সঙ্গে প্রায় একই সময় পঙ্কজ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ‘স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র’ মামলা দায়ের করে। এই মামলায় তাকে গ্রেফতারের পর কারাগারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছাকাছি সেলে তাকে রাখা হয়েছিল।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য মহান মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টি গেরিলা বাহিনীর সংগঠক ছিলেন। তিনি ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টি গেরিলা বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সারা জীবন তিনি বাম রাজনীতির আদর্শ ধারন করেছেন।
১৯৯৩ সালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম গঠনের সময় তিনি এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি দেশের প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক জনগণের জন্য ‘সামাজিক আন্দোলন’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করেন। সর্বশেষ ২০১৩ সালে তিনি ঐক্য ন্যাপ নামে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি।