ডেস্ক রিপোর্ট:
প্রতিদিন আমার বন্ধুদের কাছ থেকে একটি সাধারণ প্রশ্ন আসে, ‘কেমন আছো?’ এটি শুনতে সাধারণ হলেও, তারা যেন নিশ্চিত হতে চায়- আমি এখনও বেঁচে আছি কি-না?। কেনিয়া, নাইজেরিয়া, তুরস্ক, ব্রিটেন, জর্ডান, ইরান এবং মরক্কোসহ বিভিন্ন দেশের বন্ধুরা আমাকে একই প্রশ্ন করে থাকে। যদিও আমি তাদের উদ্দেশ্য বুঝি। তারপরও প্রতিবার যখন এই প্রশ্নটি আমাকে করা হয়, তখন উত্তর দেওয়া আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
কারণ আমার মনে পড়ে- আমি এবং আমার স্বামী বছরখানেক ধরে গড়ে তুলেছিলাম আমাদের একটি বাড়ি। সেটি ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে, কেমন আছি আমি? যখন জানি, যে জায়গায় আমার জীবনের সেরা স্মৃতিগুলি ছিল, সেই জায়গায় এখন শুধুই ধ্বংসাবশেষ, কেমন আছি আমি? যখন মনে পড়ে দ্বিতীয় দিনেই আমি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছিলাম জীবন বাঁচানোর ভয়ে, কেমন আছি আমি? যখন আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাত দিয়ে কাপড় এবং বাসন ধুঁইয়ে কাটাই, কেমন আছি আমি? যখন আমি দেখি আমার সন্তানরা পানি সংগ্রহ করার জন্য পানি ট্রাকের পেছনে দৌঁড়াচ্ছে, কেমন আছি আমি? যখন সাবানের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে গেছে, কেমন আছি আমি?
যখন ভাবি শীতকালে আমার সন্তানদের কিভাবে উষ্ণ রাখব, কেমন আছি আমি? যখন ফোন চার্জ দেওয়ার জায়গা খুঁজে বেড়াই, কেমন আছি আমি? যখন গণহত্যার মাঝেও গল্প বলার শক্তি খুঁজি, কেমন আছি আমি? যখন আত্মীয়দের খবর নিতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ খুঁজে বের করার চেষ্টা করি, কেমন আছি আমি? যখন আমি শহীদদের এবং নিখোঁজদের তালিকা দেখতে পাই, আর ভয় হয় হয়ত আমি কোনো পরিচিত নাম খুঁজে পাবো, কেমন আছি আমি? যখন আমি এতোগুলো আত্মীয় এবং প্রতিবেশীকে হারানোর শোক সামলাতে চেষ্টা করছি, কেমন আছি আমি? যখন আমি তাঁবু শিবিরের শিশুদের কাছে গিয়ে তাদের গল্প বলার চেষ্টা করি, যেন তাদের এবং নিজের জন্য এক টুকরো আশা সৃষ্টি করতে পারি, কেমন আছি আমি?
এটি এক দীর্ঘ কষ্টকর সংগ্রাম, যেখানে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি মুহূর্ত যুদ্ধ। কিন্তু তবুও আমরা আশায় আছি- প্রতিটি গল্প, প্রতিটি মুহূর্তের মধ্যে একটি নতুন সূর্যের আশা।
‘কেমন আছো?’- এটি এমন একটি প্রশ্ন, যা আমি প্রতিদিন শুনি, কিন্তু কখনোই সঠিকভাবে উত্তর দিতে পারি না। হয়তো আমি একটি অভিধান খুঁজে পাব, যেটিতে আমার অনুভূতির যথার্থ বর্ণনা দিতে সাহায্য করবে।
গাজার বাইরে, ‘কেমন আছো?’ একটি সাধারণ প্রশ্ন, যা উত্তর দিতে কোনো ভাবনা বা সময় লাগে না। কারণ সেখানে মানুষ মানবাধিকার নিয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু আমরা জানি না- গাজার ভেতরে মানবাধিকার কোথায় গেছে। আমাদের চারপাশে শুধুই মৃত্যুর দৃশ্য এবং গন্ধ। যেখানে যাই, সেখানে ধ্বংসাবশেষ, আবর্জনা এবং নর্দমা ছড়িয়ে রয়েছে।
আমি বহু বছর কঠোর পরিশ্রম করেছি, আমার সন্তানদের বড় করতে এবং তাদেরকে শক্তিশালী স্বাধীন আদর্শ নারীর রোল মডেল করতে। দুর্ভাগ্যবশত, এখন আমি আমার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। এই গণহত্যার মধ্যে আমি এমন সাধারণ একটি প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারি না, ‘কেমন আছো?’