আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
পাকিস্তানের সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের (এনএ) মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার তিন দিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের পরামর্শে ভেঙে দেওয়ার পর এখন দেশটিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির কাছ থেকে একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পৌঁছানোর পর বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও জাতীয় পরিষদের বিরোধী দলীয় নেতা রাজা রিয়াজের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রীর মনোনয়ন নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে চিঠিটি পৌঁছানোর পর বিরোধী দলীয় নেতা রিয়াজের কাছে তার সম্ভাব্য মনোনীত প্রার্থীর ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। পরে তিনি বলেছেন, ‘আমি তিনটি নাম প্রস্তাব করতে চাই।’
বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের পরামর্শে পাকিস্তানের ১৫তম জাতীয় পরিষদের বিলুপ্তি ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। গভীর রাতে টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বলেছে, পাকিস্তানের সংবিধানের ৫৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে প্রেসিডেন্ট জাতীয় পরিষদ বিলুপ্ত করেছেন।
এরপরই দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এক চিঠিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে পরামর্শের জন্য বিরোধী দলীয় নেতা রিয়াজকে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে বসার আমন্ত্রণ জানান। চিঠিতে শেহবাজ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট সংবিধানের ৫৮(১) অনুচ্ছেদের অধীনে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দিয়েছেন এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের জন্য তিনি সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত।
তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের প্রক্রিয়া সংবিধানের ২২৪-এ অনুচ্ছেদের অধীনে সম্পন্ন হবে। তিনি দেশটিতে আগামী জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধানের জন্য অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ ও বিরোধী দলীয় নেতা রিয়াজ অন্তর্র্বতীকালীন প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য প্রস্তাবিত নামের মধ্যে থেকে একজনকে চূড়ান্ত করবেন।
এখন পর্যন্ত দেশটিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনজনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে আছেন দেশটির সাবেক কূটনীতিক জলিল আব্বাস জিলানি ও পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি তাসাদুক হোসেন জিলানি। তাদের দুজনের নাম প্রস্তাব করেছে দেশটির রাজনৈতিক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। এছাড়া সিন্ধু প্রদেশের গভর্নর কামরান তেসোরির নাম প্রস্তাব করেছে রাজনৈতিক দল মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি)।
যদিও দেশটির ক্ষমতা থেকে সদ্য বিদায় নেওয়া রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও ঘোষণা দেয়নি। তবে সাবেক অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসি এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মিয়াঁ সুমরোর নামও বিবেচনায় রয়েছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা যদি তিন দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের জন্য কাউকে চূড়ান্ত করতে না পারেন, তাহলে শেষ পর্যন্ত তা সংসদীয় কমিটিতে যাবে। পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা তাদের পছন্দের প্রার্থীর নাম সংসদীয় কমিটিতে পাঠাবেন।
পরে সংসদীয় কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর নাম চূড়ান্ত করতে হবে। যদি কমিটিও ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) দুদিনের মধ্যে বিরোধীদল ও সরকারি দলের প্রস্তাবিত প্রার্থীদের মধ্যে থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত করবে।
পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ ভেঙে যাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু দেশটির বিদায়ী সরকার নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে বলে ইতিমধ্যে সতর্ক করে দিয়েছে।
দেশটিতে জনশুমারির ভিত্তিতে নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘জনশুমারি শেষ হলেই নির্বাচন হবে। এ জন্য তিন থেকে চার মাস সময়ের দরকার। ফলে নির্বাচন আগামী বছর পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে।’
সূত্র: জিও নিউজ, ডন, বিবিসি।