বুলবুল আহমেদ স্মৃতি সম্মাননা পাচ্ছেন শেখ সাদী খান

প্রকাশিত: ২:৫২ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২৪

বিনোদন ডেস্ক:

‘মহানায়ক’ বুলবুল আহমেদ ২০১০ সালের ১৫ জুলাই না-ফেরার দেশে পাড়ি জমান। প্রয়াত বরেণ্য এই অভিনেতার স্মৃতি ধরে রাখতে তাঁর পরিবার ও বুলবুল আহমেদ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রবীণ বরণীয় শিল্পীদের সম্মাননা দেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছর এ ‘মহানায়ক বুলবুল আহমেদ স্মৃতি সম্মাননা ২০২৪’ পাচ্ছেন বরেণ্য সুরকার ও সংগীত পরিচালক শেখ সাদী খান। শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর হাতে এ সম্মাননা তুলে দেওয়া হবে।

শেখ সাদী বলেন, ‘যে কোনো সম্মাননাই অনেক গৌরব এবং সম্মানের। জীবনে অনেক পুরস্কার পেয়েছি কিন্তু এ সম্মাননা আমাকে অন্যরকম আনন্দ দিয়েছে। বুলবুল আহমেদ সবার প্রিয় একজন মানুষ ছিলেন। এমন একজন মানুষের স্মৃতি সম্মাননা পদক পেতে যাচ্ছি ভেবে ভালো লাগছে’।

১৯৫০ সালের ৩ মার্চ ব্রাক্ষণবাড়িয়ারর শিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কিংবদন্তিতুল্য সংগীত পরিচালক শেখ সাদী খান। আধুনিক বাংলা গান তথা চলচ্চিত্রের গান যে ক’জন সুরকার ও সংগীত পরিচালকের হাত ধরে সমৃদ্ধ হয়েছে, তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। সত্তরের দশকে প্রখ্যাত সুরকার খোন্দকার নুরুল আলমের সহকারী হিসেবে তিনি চলচ্চিত্রে সহকারী সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে ১৯৮০ সালে একক সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে আব্দুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত ‘এখনই সময়’ চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। প্রায় ছয় দশক ধরে এখনও বিরামহীনভাবে কাজ করে চলেছেন। এই সুরস্রষ্টা উপহার দিয়েছেন– ‘জীবন মানে যন্ত্রণা’, ‘আমি চিরকাল প্রেমেরও কাঙ্গাল’, ‘ওগো বিদেশিনি তোমার চেরি ফুল দাও’, ‘ডাকে পাখি খোলো আঁখি’, ‘হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে’, ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’, ‘কাল সারারাত ছিল স্বপনেরও রাত’, ‘ভালোবাসলেই সবার সাথে ঘর বাঁধা যায়না’সহ আরও অসংখ্য কালজয়ী গান। গানের জন্য পেয়েছেন একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, রাষ্ট্রীয় একুশে পদকসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননা।

বুলবুল আহমেদ স্মৃতি সম্মাননা পদক দেওয়ার আয়োজন প্রসঙ্গে বুলবুল আহমেদ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তাঁর মেয়ে ঐন্দ্রিলা বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতিতে যাদের অবদান আছে, তাদের স্মরণ করেই প্রতিবছর বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে সম্মাননা জানিয়ে আসছি। শেখ সাদী খানের মতো গুণী মানুষকে সম্মাননা দিতে পেরে আমাদের ভালো লাগছে। শিগগিরই বাসায় গিয়ে সম্মাননা পদকটি তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।’

২০১৫ সালে ‘বুলবুল আহমেদ ফাউন্ডেশন’ গড়ে তোলা হয়। এর আগে এই সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেতা নাজমুল হুদা বাচ্চু, কেরামত মওলা, মিরানা জামান এবং এ টি এম শামসুজ্জামান।

ঢাকাই চলচ্চিত্রের একসময়ের সাড়া জাগানো নায়ক বুলবুল আহমেদের জন্ম ১৯৪১ সালে পুরান ঢাকায়। তাঁর আসল নাম তাবারক আহমেদ, তাঁর পিতামাতা তাঁকে ‘বুলবুল’ বলে ডাকতেন। আবদুল্লাহ আল-মামুনের পরিচালনায় ‘বরফ গলা নদী’ ছিল অভিনেতার প্রথম টিভি নাটক। উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকগুলো হচ্ছে ‘মালঞ্চ’, ‘ইডিয়ট’, ‘মাল্যদান’, ‘বড়দিদি’, ‘আরেক ফাল্গুন’, ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’। ধারাবাহিক ও খণ্ড নাটক মিলিয়ে চার শতাধিক নাটকে তাদের দেখা গেছে। ১৯৭৩ সালে আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের [ইউসুফ জহির] ‘ইয়ে করে বিয়ে’র মাধ্যমে প্রথম সিনেমায় অভিষেক হয় তাঁর। ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’ ও ‘দেবদাস’–এই দুটি চলচ্চিত্র দিয়ে দর্শকমনে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন।

উল্লেখযোগ্য অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘মহানায়ক’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘সূর্য্যকন্যা’ ‘ধীরে বহে মেঘনা, জীবন নিয়ে জুয়া, রূপালী সৈকতে, বধূ বিদায়, জন্ম থেকে জ্বলছি, ‘দি ফাদার’, ‘দুই নয়নের আলো’। অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালক হিসেবে দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা। তাঁর পরিচালিত ‘ওয়াদা’, ‘মহানায়ক’, ‘ভালো মানুষ’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’ ‘আকর্ষণ’, ‘গরম হাওয়া’, ‘কত যে আপন’ সিনেমাগুলো দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।