কোনোদিন ঢাকায় আসেননি অথচ রাজধানীতে ছাত্র হত্যা মামলার আসামি গ্রামের কৃষক
নিজেস্ব প্রতিবেদক:
অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র হত্যার ঘটনায় ঢাকায় দায়ের হওয়া পৃথক দুটি মামলাতে নাটোরের কৃষক আব্দুল আজিজ ও তার চাচা এনায়েত করিম রাঙ্গাকে আসামি করা হয়েছে। পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন এই দুই ব্যক্তির স্বজনেরা। এছাড়াও শনিবার (৪ জানুয়ারি) গ্রামের বাড়িতে মানববন্ধনে তাদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানায় এলাকাবাসী।
এনায়েত করিম রাঙ্গার স্ত্রী উম্মে সালমা পাপিয়া ইত্তেফাককে বলেন, ‘ভাসুর আবু জায়েদ সিংড়ার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার ছেলে ফয়সাল আহম্মেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলকের সাথেও ভালো লিয়াজু ছিল। ৫ আগস্টের পর ফয়সাল নিজেকে সমন্বয়ক দাবি করে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে এই দুটি হত্যা মামলায় আপন চাচা ও চাচাতো ভাইয়ের নাম জড়িয়েছেন। স্বামী ও ভাতিজা আজিজের মুক্তি এবং অভিযুক্ত ভাতিজা ফয়সালের শাস্তি চাই।’
মামলার এজাহার ঘেঁটে দেখা গেছে, রাজধানীর বনানী থানায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীসহ ৯৭ জনকে অভিযুক্ত করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি দায়ের করেন সাজেদা (৪০) নামের এক নারী। তিনি ময়মনসিংহের ধুবাউড়া থানার আব্দুর রহিমের কন্যা। এই মামলায় নাটোরের সিংড়া উপজেলার প্রত্যন্ত বাঁশবাড়িয়া গ্রামের জসিমুদ্দিনের ছেলে ব্যবসায়ী এনায়েত করিম রাঙ্গাকে ৮৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) গ্রামের বাড়িতে মানববন্ধনে তাদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানায় এলাকাবাসী।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) গ্রামের বাড়িতে মানববন্ধনে তাদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানায় এলাকাবাসী।
এজাহারে বলা হয়েছে- এনায়েত করিম রাঙ্গা অন্য আসামিদের সাথে ১৯ জুলাই বিকেল ৩টার দিকে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালান। একই দিন বিকেল ৫টার দিকে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালানোর দায়ে রাজধানীর বনানী থানায় আরও একটি মামলা দায়ের করেন বাছিরুল ইসলাম খান নামের এক ব্যক্তি। তিনি নরসিংদীর শিবপুরের মজলিশপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। এই মামলায় এনায়েত করিম রাঙ্গাকে ৫০ নম্বর এবং তার ভাতিজা সিংড়া উপজেলার প্রত্যন্ত বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে কৃষক আব্দুল আজিজকে ৫১ নম্বর আসামি করা হয়। এই দুটি মামলায় ২৮ ডিসেম্বর সিংড়া থেকে এনায়েত করিম রাঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হলেও বাইরে আছেন আব্দুল আজিজ।
গতকাল শনিবার দুপুরে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আব্দুল আজিজ ইত্তেফাককে বলেন, তিনি পেশায় কৃষক। গ্রামেই থাকেন। আমি কখনো ঢাকায় যাইনি। আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে তেমন কোনো ভাবনাও নেই। তবে তারা ধানের শীষে ভোট দেন। ঘটনার দিন চলনবিলে কৃষি কাজ করছিলাম। একমাস পরে জানতে পারি আমি এবং আমার চাচা ঢাকায় একটি হত্যার মামলার আসামি।
তিনি জানান, মূলত পৈত্রিক জমাজমি নিয়ে চাচা আবু জায়েদ ও চাচাতো ভাই ফয়সালের সঙ্গে তাদের বিরোধ চলছিল। বছরখানেক আগে চাচা আবু জায়েদ নিজের লাইসেন্সকৃত অস্ত্র দিয়ে ছোট ভাই তৈয়ব আলীকে গুলি করেন। এই ঘটনায় জেলহাজতে জেতে হয় জায়েদকে। ওই ঘটনায় তাকে এবং চাচা রাঙ্গাকেও দোষারোপ করেন জায়েদ। মূলত তারই প্রতিশোধ নিতে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কৃষক আব্দুল আজিজের প্রতিবেশি স্থানীয় আজমল হক তৈয়ব আলী, সুমন সরকারসহ অন্তত ৫০ জন ইত্তেফাককে বলেন, ঘটনার মাসে আব্দুল আজিজ ঢাকায় যাননি। তাদের সাথে ফসলের মাঠে কাজ করেছেন। অথচ এই ব্যক্তিকে মামলার আসামি করা হয়েছে। তাছাড়া এনায়েত করিম রাঙ্গা ছাত্রদল এবং জিয়া পরিষদের সাথে যুক্ত ছিলেন। সেই ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগ সাজিয়ে ছাত্র হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে।
ফয়সাল আহম্মেদ ইত্তেফাককে বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাপের মুখে ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত ছিলেন। পারিবারিক দ্বন্দ্ব থাকলেও দুই চাচা এবং চাচাতো ভাইকে ছাত্র হত্যা মামলায় আসামি করা নিয়ে তার কোনো হাত নেই।
এদিকে বাদি সাজেদা ও বাছিরুল ইসলাম খান মোবাইল ফোন না ধরায় মামলার বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।