কোভিড-১৯-এর বিশ্ব রাজনীতিতে কেমন হবে বাংলাদেশের অবস্থান

প্রকাশিত: ৯:২৬ অপরাহ্ণ, মে ৩, ২০২০

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলার জন্য বৈশ্বিক স্বাস্থ্য রাজনীতিতে চলছে দরকষাকষি। ইতোমধ্যে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে সিঙ্গাপুর ও মেক্সিকোর কোভিড-১৯ বিষয়ক দুটি রেজুলেশন গৃহীত হয়েছে। এছাড়া জেনেভায় (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদর দফতর) ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রেজুলেশন নিয়ে দরকষাকষি চলছে। যার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সংহতি জোরদার করা এবং সবাই যেন ন্যায্য দামে সমতার ভিত্তিতে ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী পায় সেটি নিশ্চিত করা। আশা করা হচ্ছে, আগামী ১৮ মে বিশ্ব স্বাস্থ্য অ্যাসেম্বলিতে এটি গৃহীত হবে।

ওই অ্যাসেম্বলিতে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে। নিউ ইয়র্ক বা জেনেভা যেখানেই রেজুলেশনগুলো গৃহীত হোক না কেন, তিনটি বিষয় অর্থাৎ জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি, বাস্তবায়নের জন্য অর্থ সংস্থান ও ভবিষ্যৎ মহামারি বা দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান কী হবে সে বিষয়ে এর প্রভাব আছে।

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক মনে করেন, এই স্বাস্থ্য কূটনীতি থেকে সবচেয়ে বেশি উপকার পেতে হলে আমাদের রেজুলেশন দরকষাকষি এবং গ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকতে হবে। এছাড়া ঢাকা, নিউ ইয়র্ক, জেনেভা ও ব্রাসেলসের (ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদর দফতর) মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে।

শহীদুল বলেন, ‘গত ২৩ এপ্রিল ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে সম্মিলিত দায়িত্ববোধ ও বৈশ্বিক অংশীদারের মানসিকতাসম্পন্ন একটি ব্যবস্থার কথা বলেছেন, অর্থাৎ এটি সরকারের নীতি। এটিকে বাস্তবায়নের জন্য এখন কূটনীতি কাজ করবে।’

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে দারিদ্র্য ও অসমতা বৃদ্ধি পাবে এবং প্রধানমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে গত এক দশকে আমরা গরিব জনগোষ্ঠীর অর্ধেককে দারিদ্র্যসীমার ওপরে নিয়ে এসেছি, কিন্তু তাদের অনেকে এখন আবার পিছিয়ে পড়তে পারে।’

এসব বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন বর্ষীয়ান ওই কূটনীতিক।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ রেজুলেশন নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দ্বিধাবিভক্ত। চীন জোর দিচ্ছে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা ও সহযোগিতা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রাধান্যের বিষয়ে। আবার যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রাধান্য মেনে নিতে রাজি নয় এবং তারা জোর দিচ্ছে ভাইরাসের মূল উৎস খুঁজে বের করা, বন্যপ্রাণীর বাজার বন্ধ করা, তথ্য ঠিকমতো সবাইকে দেওয়া ইত্যাদি। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য মাথায় রেখে তার কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। কারণ, এটি ব্যাহত হলে দেশ পিছিয়ে যাবে বলে মনে করেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন বড় ধা-ধা হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের সঙ্গে কীভাবে নতুন ব্যবস্থা সমন্বয় করা যায়। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট নতুন যে চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে সেগুলো কীভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে বাংলাদেশ পরিকল্পনা দিতে পারে।’ টেকসই উন্নয়নের ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে স্বাস্থ্য, অসমতা, জলবায়ু পরিবর্তন, সুশাসন ও অংশীদারিত্বের লক্ষ্যগুলো নিয়ে নতুন পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে চিন্তা করে দেশীয় বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রস্তাব দিতে পারে বাংলাদেশ বলে মনে করেন তিনি।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদান, প্রচুর বাংলাদেশির বিভিন্ন দেশে কাজ করা এবং তৈরি পোশাক শিল্পে অনেক নারী শ্রমিক কাজ করছেন- এ ধরনের ইতিবাচক বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে শহীদুল বলেন, ‘এসডিজি বা গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন মাইগ্রেশনের সময়ে বাংলাদেশ নেতৃত্ব নিয়েছিল এবং এখন সেই রকম ভূমিকা নেওয়ার সময় এসেছে।’

কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য একটি বৈশ্বিক তহবিল গঠনের জন্য আগামী ৪ মে ইইউ’র তত্ত্বাবধানে একটি প্লেজ কনফারেন্স হবে জেনেভায় এবং এখানে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন শহীদুল। তিনি বলেন, ‘তহবিল সংগ্রহের সময়ে একটি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে। এটি না দিলে দরকষাকষির টেবিলে কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করা এবং ভূমিকা রাখা কঠিন।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে অত্যন্ত কর্মতৎপর থাকতে হবে বলে জানিয়ে শহীদুল বলেন, ‘আর্থিক প্রতিশ্রুতির থেকেও বড় বিষয় হলো, বাংলাদেশ এ বিষয়ে যে তৎপর সেটি সবাইকে দেখাতে হবে। কূটনীতিতে বড় জিনিস হলো শুধু তৎপর হলেই হবে না, এটি যেন দৃশ্যমান হয় এবং সবাই দেখেন সেটি নিশ্চিত করা। সূত্র-বাংলাট্রিবিউন।