খাগড়াছড়ির সীমান্ত এলাকা থেকে ২ হাজার পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার বিজিবির

প্রকাশিত: ১২:৫৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৪, ২০২৪

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

ভারী বর্ষণ ও ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢলে সীমান্তবর্তী ফেনী নদী প্লাবিত হয়ে নদীর পাড় ঘেঁষে অবস্থিত খাগড়াছড়ির রামগড়, মাটিরাঙ্গা ও ফটিকছড়ির শত-শত পানিবন্দী অসহায় মানুষকে উদ্ধার করে প্রাণ বাঁচিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
৪৩ ব্যাটালিয়নের বিজিবি বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ও শুক্রবার (২৩ আগস্ট) এ দুই দিনে প্রায় দুই হাজার পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার করেছে এবং তাদেরকে শুকনা ও তৈরি করা খাবার দিয়েছে। এসময় বিজিবি পানিবন্দী মানুষের সঙ্গে বহু গবাদিপশুও উদ্ধার করেছে।

ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরা ও খাগড়াছড়ির রামগড়, মাটিরাঙ্গা এবং উত্তর ফটিকছড়ির পাশ দিয়ে প্রবাহিত ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তীরবর্তী অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়। বছরের বেশিরভাগ সময় ক্ষীণ স্রোতধারার এ নদীটি এবার স্মরণকালের ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।
তীরবর্তী গ্রামবাসীরা জানায়, আকস্মিকভাবে ফেনী নদী এভাবে ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে এটা তারা কখনও ভাবেননি। অল্প সময়ের মধ্যে নদীর পানি প্লাবিত হয়ে পাশের গ্রামগুলো ডুবে যায়। গ্রামবাসীরা বাড়ি-ঘর ছেড়ে কোথাও আশ্রয় নেওয়ারও সময় পাননি। আকস্মিক পানিবন্দী হয়ে তারা হতবিহবল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বিওপি থেকে বিজিবির সদস্যরা তাদের প্রাণ বাঁচাতে এগিয়ে আসে।

আঁধারমানিকের ষাটোর্ধ বাসিন্দা আবুল হাশেম বলেন, বিজিবি বোট ও ভেলা দিয়ে পানিবন্দী অসহায় মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়। তিনি আরও জানান, তারা গরু-ছাগলও উদ্ধার করে বাঁচিয়েছে।
বিজিবি জানায়, রামগড় ব্যাটালিয়নের (৪৩ বিজিবি) অধীন আঁধারমানিক বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ৬৯ পরিবারের ৩০৩ জন সদস্য, নলুয়াটিলা বিওপির দায়িত্বপূর্ণ ১০৫টি পরিবারের ৬০০ জন সদস্য, লাচারীপাড়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ ৪১টি পরিবারের ২০৬ জন সদস্য এবং লক্ষ্মীছড়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ ৮১টি পরিবারের ৪৪১ সদস্যসহ মোট ২৯৬টি পরিবারের ১ হাজার ৫৫০ জন সদস্যকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে বিজিবি।

এ ছাড়া ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় আকস্মিক সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গরীব ও অসহায় ২০০টি পরিবারের মাঝে বৃহস্পতিবার তাৎক্ষণিকভাবে ত্রাণসামগ্রীও বিতরণ করে। এসব ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তেল, লবণ এবং শুকনা খাবাবের মধ্যে রয়েছে চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট, বিশুদ্ধ পানি, গুড় ও কলা।

বিজিবি আরও জানায়, শুক্রবারও পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারের কার্যক্রম চালানো হয়। শুক্রবার বিভিন্ন বিওপির আওতাধীন বানভাসি অসহায় মানুষের মাঝে শুকনা ও তৈরি খাবার এবং ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। প্রায় ৪২৫ পরিবারের মাঝে এসব মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়।

রামগড় ৪৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল সৈয়দ ইমাম হোসেন বলেন, গত দুইদিন ধরে বন্যাদুর্গত মানুষের সহায়তার কাজে নিয়োজিত আছে বিজিবি। ব্যাটালিয়নের অধীনের বিওপিগুলোর বিজিবি সার্বক্ষণিক কাজ করছে। দুই দিনে প্রায় দুই হাজার পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। শুকনা ও তৈরি খাবার এবং ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

তিনি বলেন, শুক্রবার ৪২৫টি পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী যেমন- খাদ্য সামগ্রী ১৭৫ পরিবার, শুকনো খাবার ১০০ পরিবার এবং রান্না করা খাবার ১৫০ পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বিশুদ্ধ খাবার পানিও বিতরণ করা হয়।

তিনিও আরও বলেন, বন্যাদুর্গত মানুষের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবার কার্যক্রমও নেওয়া হয়েছে।