নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দারুস সালাম থানায় দায়ের করা নাশকতার অভিযোগে করা আরও একটি মামলা বাতিল করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্টে। এ নিয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা ২৩টি মামলা বাতিল করা হয়েছে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। এখন তার বিরুদ্ধে নাইকো, বড়পুকুরিয়া মামলা রয়েছে। অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার সাজা স্থগিত করেছেন রাষ্ট্রপতি।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় দেন।
আদালতে আজ খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী কায়সার কামাল, মাহবুব উদ্দিন খোকন, মো. জাকির হোসেন ভূঁইয়া। খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী, রাগীব রউফ চৌধুরী, গাজী কামরুল ইসলাম, মো. মাকসুদ উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার।
এর আগে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ২০১৫ সালের ৩ মার্চ দারুস সালাম থানার তৎকালীন এস আই মো. শাহ আলম এই মামলা দায়ের করেন। পরে ওই মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করা হয়। শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ১৬ মে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা কেন বাতিল করা হবে না এবং মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে আজ মামলা বাতিল করে রায় দেন।
এর আগে বুধবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ ও নাশকতার অভিযোগে করা ১১টি মামলা বাতিল করেছেন হাইকোর্টে। এ মামলাগুলো বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করেছেন আদালত।
এ বিষয়ে কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, এই মামলাগুলো ছিল বে-আইনি। সেটা আজ প্রমাণিত হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অনুমতি নিতে হয়। সেটা নেওয়া হয়নি। নাশকতার মামলা যে ধারায় করা হয়েছে, সেখানে পাবলিক প্রপার্টি হতে হয়। এখানে সবগুলো প্রাইভেট প্রপার্টি। সেটা তারা জেনেও মামলা দিয়েছে। আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত আছে ফিজিক্যালি উপস্থিত থাকতে হবে। কিন্তু খালেদা জিয়া তখন গুলশানে অবরুদ্ধ ছিলেন। তারপরও রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এ মামলা দেওয়া হয়েছে।
আইনজীবীর জানান, ১১টি মামলার কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন খালেদা জিয়া। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের বিভিন্ন সময় হাইকোর্ট রুলসহ মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন। এই রুলের ওপর শুনানি শেষে বুধবার রায় দেওয়া হয়।
মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজধানীর দারুস সালাম থানায় করা নাশকতার আটটি, যাত্রাবাড়ী থানার দুটি ও রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলা। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যে করার অভিযোগে ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাটি দায়ের করা হয়।
এদিকে যাত্রাবাড়ী থানার মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি রাতে যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় গ্লোরি পরিবহনের একটি বাসে পেট্রল বোমা হামলা হয়। এতে বাসের ২৯ যাত্রী দগ্ধ হন। পরে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নূর আলম (৬০) নামের এক যাত্রী। ওই ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন থানার উপ-পরিদর্শক এস আই কে এম নুরুজ্জামান। ওই বছরের ৬ মে খালেদা জিয়াসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক বশির আহমেদ।
অন্যদিকে ২০১৫ সালে দারুস সালাম থানা এলাকায় নাশকতার অভিযোগে আটটি মামলা দায়ের করা হয়। এই আট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আসামি করা হয়। ২০১৭ সালের বিভিন্ন সময়ে মামলাগুলোয় চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।