খুচরা বাজারে ৪০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে দেশি পেঁয়াজ
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
ভারত রফতানি বন্ধের আদেশ তুলে নেয়ায় দেশের বাজারে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। মাসেরও কম সময়ের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে তিন ভাগের এক ভাগে চলে এসেছে। রাজধানীর বেশিরভাগ খুচরা বাজারে ৪০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে দেশি পেঁয়াজ।
শুক্রবার রাজধানীর শ্যামবাজার, কারওয়ান বাজার, ফকিরাপুল, রামপুরা, শান্তিনগর, মালিবাগ হাজীপাড়া, সেগুনবাগিচা, খিলগাঁও অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব থেকে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫৫ টাকা। আর মোটামুটি ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকার মধ্যে। এক সপ্তাহ আগে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৭০-৮০ টাকা। আর মার্চের শুরুতে ছিল ১০০-১২০ টাকা কেজি।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত রফতানি বন্ধ করলে দেশের বাজারে হু হু করে দাম বেড়ে পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। এরপর সরকারের নানামুখী তৎপরতায় পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও তা আর একশ টাকার নিচে নামেনি।
তবে গত মাসের শুরুতে রফতানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ভারত, যা আগামী ১৫ মার্চ থেকে কার্যকর হবে। ভারত রফতানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর দেশের বাজারে দফায় দফায় কমতে থাকে পেঁয়াজের কেজি। চলতি মাসেই ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি খুচরায় কমেছে ৮০ টাকা পর্যন্ত।
খুচরার পাশাপাশি পাইকারিতেও পেঁয়াজের দাম কমেছে। রাজধানীতে পেঁয়াজের অন্যতম পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে বাছাই করা ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা। আর অবাছাই করা দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২-৩৫ টাকা কেজি।
শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী সোহেল বলেন, ভারত রফতানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর থেকেই পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। কিছুদিন আগে যে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৮০-৯০ টাকা বিক্রি করেছি, এখন তা ৩২-৩৫ টাকা কেজি বিক্রি করছে। ভারতের পেঁয়াজ বাজারে আসলে দাম হয় তো আরও কমতে পারে।
শ্যামবাজারের মতো কারওয়ান বাজারেও মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ৫০ টাকার ওপরে। বাজারটিতে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৩৮ টাকা, যা কিছুদিন আগে ছিল ৯০ টাকার ওপরে।
পেঁয়াজের এই দাম কমার বিষয়ে ব্যবসায়ী নোয়াব আলী বলেন, পেঁয়াজের দাম অনেক দিন মানুষকে ভুগিয়েছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আমরা ব্যবসায়ীরাও কম ভুগিনি। এখন পেঁয়াজ নিয়ে ভোগান্তি শেষে। তবে চাষিরা মার খাবেন (ধরা খাওয়া)। কারণ চাষিদের ধারণা ছিল পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকার ওপরে বিক্রি করতে পারবেন, কিন্তু এখন পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে। সামনে পেঁয়াজের দাম আরও কমতে পারে।
এদিকে খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, রামপুরা, খিলগাঁও ও মালিবাগ অঞ্চলে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০৪৫ টাকা। তবে শান্তিনগর বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে শান্তিনগরের ব্যবসায়ী আরমান বলেন, এখন পেঁয়াজের দাম প্রতিদিনই কমছে। আমাদের কাছে যে পেঁয়াজ আছে তা বেশি দামে কেনা। এই পেঁয়াজ ৫০ টাকার নিচে বিক্রি করার সুযোগ নেই। আমরা কম দামে পেঁয়াজ আনলে তখন আবার কম দামে বিক্রি করবো।
দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি আমদানি করা পেঁয়াজের দামও কমেছে। তবে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম তুলনামূলক দেশি পেঁয়াজের থেকে বেশি। ভালো মানের আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা। আর বড় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা।
পেঁয়াজের পাশাপাশি রসুনের দামও কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা রসুনের দাম কেজিতে কমেছে ২০ টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহে ১৭০-১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আমদানি করা রসুন এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। আর দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-৯০ টাকা।
এদিকে বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, লাউ, করলা, টমেটো, শশা, শিম, শালগম, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। করলা আগের মতো ১২০-১৩০ কেজি বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা পিস। বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা।
এছাড়া শসা ২০-৩০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, পাকা টমেটো ৩০-৪০ টাকা, শিম ৩০-৪০ টাকা, ফুলকপি-বাঁধাকপি পিস ৩০-৩৫ টাকা, গাজর ২০-৩০ টাকা, শালগম ২৫-৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
তবে সপ্তাহের ব্যবধানে পটল, মুলা ও বেগুনের দাম কিছুটা কমেছে। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩০-৩৫ টাকা। গত সপ্তাহে ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বেগুনের দাম কমে ৩০ টাকায় নেমেছে। পটল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০-৮০ টাকা কেজি। আর কাঁচামরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) আগের মতোই ১৫-২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
রামপুরার ব্যবসায়ী আলম বলেন, শীতের ভর মৌসুমেও এবার সবজির দাম তুলনামূলক বেশি ছিল। তবে সম্প্রতি প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। ১০০ টাকার লাউ এখন ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৮০ টাকার পটল ৫০ টাকা হয়েছে। সামনে পটলের দাম আরও কমবে। তবে অন্যান্য সবজির দাম কমার খুব একটা সম্ভাবনা নেই।
বিভিন্ন মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-৫০০ টাকা। নলা (ছোট রুই) মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকা কেজি। তেলাপিয়া ১৩০-১৭০ টাকা, পাঙাশ ১৪০-১৮০ টাকা কেজি, শিং ৩০০-৪৫০ টাকা, শোল মাছ ৪০০-৭৫০ টাকা, পাবদা ৪৫০-৬০০ টাকা, বোয়াল ৫০০-৮০০ টাকা, টেংরা ৪৫০-৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকা কেজি। পাকিস্তানি কক মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০-২৪০ টাকা। লাল লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা কেজি। গরুর মাংস ৫৫০-৫৭০ টাকা এবং খাসির মাংস ৭০০-৮৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মাছ ও মাংসের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে।