জেলা প্রতিনিধি, শরীয়তপুর
শরীয়তপুরে বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ স্টেডিয়ামে মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলার প্রস্তুতি চলছে। এরইমধ্য মাঠজুড়ে খুঁড়ে বসানো হয়েছে বিভিন্ন স্টল। দীর্ঘসময় খেলা বন্ধ রেখে মেলা আয়োজন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপ্রেমীরা। এভাবে খেলা বন্ধ রেখে মেলার আয়োজন করায় ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরে খেলোয়াড়দের জন্য একটি মাত্র স্টেডিয়াম। সেখানে সকাল বিকেল অনুশীলন করে থাকেন তারা। জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে গত ১২ জানুয়ারি থেকে স্টেডিয়ামে বাণিজ্যমেলার প্রস্তুতি চালিয়ে আসছে মণিপুরি তাঁত জামদানি বেনারসি কল্যাণ ফাউন্ডেশন। আগামী ৩০ জানুয়ারি থেকে এক মাসব্যাপী এই মাঠে মেলা হওয়ার কথা রয়েছে। এতে প্রায় ৩ মাস বন্ধ থাকবে খেলোয়াড়দের খেলাধুলা।
সরেজমিনে স্টেডিয়াম মাঠে গিয়ে দেখা যায়, খেলার পিচটিকে চট দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। পিচ ঘেঁষে সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করে তৈরি করা হয়েছে লোহার টাওয়ার। এছাড়াও মাঠের পুরো অংশ জুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি করে ৫০টি স্টল তৈরি করা হচ্ছে।
স্টেডিয়ামের মাঠে বাণিজ্যমেলার আয়োজন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনূর্ধ্ব-১৪ দলের সাবেক খেলোয়াড় রাকিব হোসেন। তিনি বলেন, আমরা আগে স্টেডিয়ামে খেলাধুলা করতাম। খেলাধুলায় আমাদের উদ্বুদ্ধ না করে জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও প্রশাসন ব্যবসার আয়োজন করে যাচ্ছে। এভাবে চললে ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলা থেকে দূরে সরে মোবাইলে আসক্ত হয়ে যাবে। অতি দ্রুত এখান থেকে মেলা সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাই।
নিয়মিত স্টেডিয়াম মাঠে ক্রিকেট অনুশীলন করেন আফিফ হাসান। তিনি বলেন, এই মৌসুম আমাদের খেলাধুলার জন্য বেশি উপযোগী। এখানে ১৫ দিন ধরে খেলাধুলা বন্ধ রেখে মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। তাছাড়া মেলা শেষ করে সবকিছু অপসারণ করতে আরও দেড় মাস সময় লাগবে। এতে আমাদের দীর্ঘদিন খেলাধুলা বন্ধ থাকবে। আমরা খেলোয়াড়রা ভোগান্তির শিকার হচ্ছি।
মিরাজ আহম্মেদ নামে এক কলেজছাত্র বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি আমরা এই স্টেডিয়াম মাঠে খেলতে আসি। বেশ কিছুদিন ধরে এখানে মেলার জন্য স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। তাই আপাতত আমাদের খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া যেভাবে খোঁড়াখুঁড়ি করে ইটের গাঁথুনি দিয়ে স্টল করা হচ্ছে এতে কবে নাগাদ মাঠ খেলার উপযোগী হবে বলা মুশকিল।
স্টেডিয়াম মাঠে খেলাধুলা বন্ধ রেখে মেলা বসানোর বিষয়ে কেন আপত্তি জানাননি এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম বলেন, আসলে জেলার মানুষের জন্য বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। তারা যাতে কিছুটা হলেও বিনোদন পান সেজন্য মেলার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া মাঠের উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিজস্ব কোনো তহবিল নেই। স্টেডিয়ামে মেলার আয়োজন করায় সংস্থার তহবিলে কিছুটা হলেও অর্থ আসবে।
আব্দুস সালাম আরও বলেন, মাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এটা সত্য। তবে মেলার পর উন্নয়নকাজ করবো আমরা। এটা কোনো বিষয় না। যেহেতু পুরো মাঠে দুই ফুট করে মাটি ফেলে উঁচু করা হবে, সেহেতু দেওয়ালের ইট তুলে মাটি দিলেই কাজ হয়ে যাবে। মেলার আয়োজন থেকে যে অর্থ পাবো তা দিয়ে মাঠের সংস্কারকাজ শুরু করবো আমরা।
খেলার মাঠে মেলা বসানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ বলেন, সারাদেশে মেলাগুলো খেলার মাঠেই হয়। খেলার মাঠে মেলার আয়োজন করা যাবে না, এমন কোনো বিধিনিষেধ নেই। এমন নির্দেশনা আপনারা পেলেন কোথায়? কারা মেলার আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে তাদের খুঁজে বের করতে চাই। তারা এসব নির্দেশনা পেলো কোথায়? আশপাশের বহু জেলায় খেলার মাঠে মেলা বসে। খেলার মাঠে না বসলে মেলা বসবে কোথায়? ধানক্ষেতে? আমিই মেলার অনুমোদন দিয়েছি, সবকিছু বিবেচনা করেই দিয়েছি। স্টেডিয়ামের মাঠে মেলার সব প্রস্তুতি চলছে। সেখানেই মেলা হবে।