গণটিকাদানে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। আইএমএফ, ওয়ার্ল্ডব্যাংক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত সংস্থা ‘টাস্কফোর্স অন কোভিড ১৯ ভ্যাকসিনস’- এর ওয়েবসাইটে শুক্রবার এই তথ্য জানানো হয়েছে।
‘টাস্কফোর্স অন কোভিড ১৯ ভ্যাকসিনস’- এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে গড়ে প্রতি সপ্তাহে প্রতি ১০০ জন মানুষের মধ্যে করোনা টিকার ডোজ নিচ্ছেন শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ মানুষ।
অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই হার শূন্য দশমিক ৩১, পাকিস্তানে শূন্য দশমিক ১৯, নেপালে শূন্য দশমিক ৩৩ এবং শ্রীলঙ্কায় ১ দশমিক ৬৩।
গড়ে প্রতি সপ্তাহে প্রতি ১০০ জন মানুষের মধ্যে করোনা টিকার ডোজ নেওয়ার এই হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশসমূহ হলো আফগানিস্তান, ভুটান ও মালদ্বীপ। আফগানিস্তানে এই হার শূন্য দশমিক ০৫, ভুটানে শূন্য দশমিক ০৪ এবং মালদ্বীপে শূন্য দশমিক ০৮।
টাস্কফোর্সের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি ৪০ লাখ ৭০ হাজার এবং যে গতিতে বর্তমানে টিকাদান চলছে, তা অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে দেশের ৪০ শতাংশ মানুষকে এবং ২০২২ সালের মাঝামাঝি দেশের ৬০ শতাংশ মানুষকে করোনা টিকার আওতায় আনার যে লক্ষ্য বাংলাদেশ নিয়েছিল তা কখনওই পূরণ হওয়া সম্ভব নয়।
২০২১ সাল শেষ হওয়ার আগেই দেশের ৪০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হলে সাপ্তাহিক টিকাদানের হার শূন্য দশমিক ৪৯- এ উন্নীত করতে হবে বলে জানিয়েছে টাস্কফোর্স। অন্যদিকে ২০২২ সালের মাঝামাঝি নাগাদ দেশের ৬০ শতাংশ জনগণকে টিকার আওতায় আনতে হলে সাপ্তাহিক টিকাদানের হার উন্নীত করতে হবে শূণ্য দশমিক ৩৫- এ।
‘টাস্কফোর্স অন কোভিড ১৯ ভ্যাকসিনস’- এর ওয়েবাসাইটে আরও বলা হয়েছে, ২০২১ সালে মধ্যে ৪০ শতাংশ জনগণকে টিকার আওতায় আনতে হলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৩ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার করোনা টিকার ডোজ এবং ২০২২ সালের মাঝমাঝি সময়ের মধ্যে ৬০ শতাংশ জনগণকে টিকা দিতে হলে প্রয়োজন ১৯ কোটি ৭০ লাখ ৬ হাজার ডোজ।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে বাংলাদেশ। টাস্কফোর্সের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, কর্মসূচির জন্য এ পর্যন্ত মোট ১৫ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজার ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করেছে দেশটি এবং সেসব চুক্তির অধীনে পেয়েছে এখন পর্যন্ত পেয়েছে মোট ২ কোটি ৫০ লাখ ৮০ হাজার ডোজ টিকা।
বাংলাদেশ সরকার দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকাদানের পরিকল্পনা নিয়েছে; কিন্তু সরকারি হিসেব অনুযায়ী, জুলাইয়ের ২৫ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৭০ লাখ ৫৬ হাজার মানুষ করোনা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন; আর টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন ৪০ লাখ ৩০ হাজার মানুষ।
গত ফেব্রুয়ারি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার মাধ্যমে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছিল বাংলাদেশ; কিন্তু চলতি মার্চ থেকে ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার প্রেক্ষিতে ভারত টিকা রফতানি বন্ধ করে দিলে গতিহীন হয়ে পড়ে টিকাদান কর্মসূচি।
বেশ কিছুদিন প্রায় স্থবির থাকার পর সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকা সহযোগিতা প্রকল্প কোভ্যাক্স থেকে সিনোফার্ম, ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার ডোজের চালান বাংলাদেশে আসার পর ফের কিছুটা গতি ফেরে কর্মসূচিতে।
এদিকে কোভ্যাক্সের পাশাপাশি গত মে ও জুন মাসে মাসে করোনা টিকা সিনোফার্মের ১০ লাখ ১০ হাজার ডোজ উপহার হিসেবে বাংলাদেশে পাঠায় চীন। বর্তমানে দেশের ৬৭ টি টিকাদান কেন্দ্রে সিনোফার্মের টিকার ডোজ দেওয়া হচ্ছে।
ইতোমধ্যে এই টিকার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ কর্পোরেশনের সঙ্গে ৩ কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। সেই চুক্তির ৭০ লাখ টিকা খুব দ্রুতই পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
এদিকে, জুলাইয়ের ২৪ তারিখ জাপান থেকে ২ লাখ ৪৫ হাজার ২০০ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। টিকাদান কর্মসূচিতে যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১ম ডোজ নিয়েছিলেন, তাদেরকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কাজে ব্যবহার হবে এগুলো।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে টিকার ডোজ ক্রয় সংক্রান্ত যেসব চুক্তি হয়েছে, তাতে আশা করা হচ্ছে চলতি আগস্টে বাংলাদেশে মোট ১ কোটি ২০ লাখ ৯০ হাজার ডোজ টিকার চালান পৌঁছাবে।
টাস্কফোর্সের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যে গতিতে টিকাদান চলছে, তা অব্যাহত থাকলে চলতি বছরের শেষে দেশের মোট জনসংখ্যার ১৯ দশমিক ৬৪ শতাংশকে টিকার আওতায় আনতে সক্ষম হবে দেশটি