গণডাকাতিই ওদের নেশা ও পেশা

প্রকাশিত: ৫:০৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ৪, ২০২৩

এসএম দেলোয়ার হোসেন:

ওরা সংঘবদ্ধ ডাকাতদল। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ওদের রয়েছে শাখা-উপশাখা। রয়েছে প্রধান তিনটি গ্রুপ। এক একটি গ্রুপের একেক দায়িত্ব পালন করে ওরা। প্রতিটি গ্রুপ বিভক্ত হয়ে যেখানে সেখানে ডাকাতির মিশন চালিয়ে নগদ টাকা স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে নির্বিঘ্নে যায় পালিয়ে। তিন চার ভাগে বিভক্ত হয়ে মিশন চালায় ওরা। এমনই একটি আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সন্ধান পেয়েছে র‍্যাব। ধরা পড়েছে গণ ডাকাতি চক্রের সক্রিয় ৮ সদস্য। এরা হলেন-  মো. সুমন মাতুব্বর (৪২), মো. ইসমাইল সরদার ওরফে লিটন (৩৮), মো. মামুন সরদার (৩০), মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৩), মো. হারুন ব্যাপারী (৫৬), জলিল ওরফে সম্পদ বেপারী (৬১), শেখ জাহাঙ্গীর (৫২), ও মো. রুবেল মোল্লা (৩৪)। আজ মঙ্গলবার (৪ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-১০ এর অধিনায়ক এডিশনাল ডিআইজি মো. ফরিদ উদ্দিন।

তিনি বলেন, গত ২৭ মে  ফরিদপুরের কোতয়ালি থানার বাখন্ডা বাজারে গণডাকাতি করে ১৫ সদস্যের একটি ডাকাত দল। ডাকাত দলটি স্বর্ণের দোকান, মুদি দোকান, ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানসহ বেশ কয়েকটি দোকানের মালামাল ডাকাতি করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ডাকাতি হওয়া দোকানের মালিকরা বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতয়ালি থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ডাকাতি মামলা করেন। ডাকাত দলটির রয়েছে ৩৫ জনের মতো একটি গ্রুপ। ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ডাকাত দলটির এই সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের কাজ করে আসছিলেন।

র‍্যাব-১০ এর অধিনায়ক আরও জানান, তাদের রয়েছে বড় বড় তিনটি গ্রুপ। এসব গ্রুপের রয়েছে আবার দুই তিনটি সাব গ্রুপও। অস্ত্রের পাশাপাশি ককটেল ব্যবহার করে আতঙ্ক সৃষ্টি করতো। আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের সর্দারসহ এই গ্রুপের আটজনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-১০)।

তিনি জানান, ওই মামলার ছাঁয়া তদন্তকালে বিষটি নিশ্চিত হয়ে ডাকাত দলকে ধরতে মাঠে নামে র‍্যাব-১০ এর একটি দল। গোপন সংবাদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গতকাল সোমবার (৩ জুলাই) দিনভর রাজধানীর শ্যামপুর, লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, শ্যামলী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও মাদারীপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গণ ডাকাতি চক্রের সক্রিয় ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত কাটার (তালা কাটায় ব্যবহৃত), রুপার অলংকার ও ১৫টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এছাড়া সুমন মাতুব্বর ও আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছ থেকে ডাকাতির জন্য ব্যবহৃত ককটেল তৈরির সালফার ও ২টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

এডিশনাল ডিআইজি মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, তারা বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও রাজবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির উদ্দেশ্যে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে স্বর্ণালংকার, টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ ডাকাতি করে আসছিল। তারা ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, বরিশাল-ফরিদপুর, মাওয়া- গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন আন্তঃজেলা মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন প্রকার যানবাহন থামিয়ে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ডাকাতি করে আসছিল।

র‍্যাব-১০ এর অধিনায়ক আরও জানান, ডাকাত সুমনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মারামারি ও হত্যা চেষ্টাসহ মোট ২০টি মামলা রয়েছে। ডাকাত মামুন সরদারের বিরুদ্ধে ছিনতাই ও মারামারিসহ ৩টি মামলা রয়েছে। ডাকাত সর্দার মো. ইসমাইল সরদার ওরফে লিটনের বিরুদ্ধে ২টি ডাকাতি মামলা রয়েছে। ডাকাত মো. হারুন ব্যাপারীর বিরুদ্ধে ২টি ডাকাতি ও ১টি অপহরণ মামলা রয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফরিদ উদ্দিন বলেন, ডাকাত দলের সদস্যরা ছোটখাটো ব্যবসা করতো। যখন যেই কাজ পায় সেটা করতো তারা। আর যেহেতু অপরাধপ্রবণ তারা দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি করতো। ফরিদপুরে ডাকাতির ঘটনায় আমরা ১৫ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছি। এ ঘটনায় তারা ৫০ লাখ টাকার মালামাল নিয়েছে। দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তারা এই ডাকাতি করতো। তারা যেসব জায়গায় ডাকাতি করবে সেখানে আগে পর্যবেক্ষণ করে নেয়।

ছিনতাই ও ডাকাতির বিষয়ে তিনি বলেন, আইনে রয়েছে কোনো ঘটনায় যখন চারজন জড়িত থাকে তখন সেটি ছিনতাই বলে ধরা হয়। আর ভয় দেখিয়ে পাঁচজন বা তার বেশি হলেই সেটা ডাকাতি হয়ে যায়। চক্রের সদস্যরা ছিনতাই ও ডাকাতির কাজেও জড়িত থাকতো। যেখানে থাকে সেখানেই তারা ছিনতাই ও ডাকাতি করে। ডাকাতি করাই ওদেরকে নেশা ও পেশা। ছিনতাই ও ডাকাতির বিষয়ে র‌্যাবের এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ডাকাতির এ ঘটনায় গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান র‍্যাব-১০ এর অধিনায়ক এডিশনাল ডিআইজি মো. ফরিদ উদ্দিন।