
নিজেস্ব প্রতিবেদক:
চৈত্রের খরতাপ, বৈশাখের দাবদাহ কিংবা আষাঢ়ের আগের অস্বস্তিকর গরম-সব মিলিয়ে আমাদের দেশের গ্রীষ্মকাল বেশ দীর্ঘ এবং ক্লান্তিকর। এই সময় শরীরে ঘাম বেশি হয়, ক্লান্তি বাড়ে, পানিশূন্যতার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। আর শুধু ঠান্ডা পানি পান করলেই শরীর ঠান্ডা থাক-বে-এমনটা ভাবলে ভুল হবে। এই সময়ে এমন কিছু খাবার খেতে হবে যা শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখবে, হজমে সহ-ায়ক হবে এবং প্রয়োজনীয় শক্তিও দেবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে কার্যকর কিছু খাবারের কথা।
পানিযুক্ত ফল: প্রাকৃতিক ঠান্ডার উৎস
গরমের সময়ে তরমুজ, বাঙ্গি, শসা, আমড়া, লিচু ও কমলার মতো মৌসুমী ফল যেন একরকম আশীর্বাদ। এ ধরনের ফল পানিশূন্যতা রোধ করে এবং শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
ক্স তরমুজ: প্রায় ৯২% পানি থাকে, যা শরীর ঠান্ডা রাখে ও হাইড্রেশন বজায় রাখে।
ক্স বাঙ্গি: ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর।
ক্স কমলা ও মাল্টা: ভিটামিন সি-এর উৎস, শরীরকে রিফ্রেশ করে।
শুধু ফল নয়, শসা, টমেটো, লেটুস, ক্যাপসিকাম-এর মতো শাকসবজিও নিয়মিত খাবারে রাখুন। এগুলোতে যেমন পানি বেশি, তেমনি হজমেও সহায়ক।
দই ও প্রোবায়োটিক পেট ঠান্ডা, শরীর আরাম
গরমে দই খাওয়ার অভ্যাস খুব উপকারী। এতে থাকা প্রোবায়ে-এটিক ব্যাকটেরিয়া অস্ত্রকে স্বাস্থ্যকর রাখে এবং গ্যাস্ট্রিকের সম-স্যা কমায়।
ক্স একবাটি ঠান্ডা টকদই বা লবণ-জিরা দিয়ে বানানো বাটারনি মল্ক (ঘোল) হতে পারে দুপুরের এক আদর্শ পানীয়।
ক্স চাইলে দই দিয়ে তৈরি ফ্রুট কাস্টার্ড বা ডেজার্ট স্মৃদিও খেতে পারেন, স্বাদ ও স্বাস্থ্য দুই-ই বজায় থাকবে।
হালকা আমিষ, ভারী নয়
গ্রীষ্মকালে বেশি চর্বিযুক্ত খাবার (যেমন গরু বা খাসির মাংস) শরীরে তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং হজমে সময় নেয়। এর বদলে খান-
ক্স মাছ, বিশেষ করে রুই, কাতলা বা পাঙাশের মতো দেশি মাছ।
ক্স মসুর ডাল, যা হালকা এবং সহজপাচ্য।
ক্স ডিমের সাদা অংশ, প্রোটিন পূরণে সহায়ক ও হালকা।
এই সময় রোস্ট, ভাজাভুজি বা কড়া মসলাযুক্ত খাবার কমিয়ে দিন। বরং পাতলা ভাজি, ডাল-ভাত এবং লেবু বা টক দইয়ের মতো খাবারে মনোযোগ দিন।
শরবত, ভেষজ চা ও হাইড্রেটিং পানীয়
চিনিযুক্ত কোমল পানীয় ও ঠান্ডা কফি গরমে আরাম দিলেও শরীর থেকে পানি বের করে দেয় এবং ক্ষতিকর। এর পরিবর্তে খান-
ক্স বেল, তাল, খেজুরের শরবত
ক্স লেবু ও পুদিনার শরবত
ক্স ভেষজ চা (তুলসী, আদা)
সময় বুঝে খাওয়ার অভ্যাস
দিনের সবচেয়ে গরম সময় দুপুরে চেষ্টা করুন হালকা খাবার খেতে। দই-ভাত, সবজি-ডাল বা ফলের সালাদ হতে পারে দুপুরের আদর্শ মেন্যু।
ক্স সকালে ও সন্ধ্যায়, যখন আবহাওয়া তুলনামূলক ঠান্ডা, তখন ভারী খাবার খেতে পারেন।
ক্স রাতে ঘুমের আগে খুব ঠান্ডা বা ভারী কিছু এড়িয়ে চলুন।
এড়িয়ে চলুন যা গরম বাড়ায়
ক্স ক্যাফেইন: কফি, চা বেশি খেলে পানিশূন্যতা বাড়ে
ক্স অতিরিক্ত মসলাযুক্ত ও তেলচিটে খাবার
ক্স অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয়
গরমে শুধু ছাতা, সানস্ক্রিন বা ঠান্ডা পানীয় নয় স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসই পারে আপনাকে সত্যিকারের স্বস্তি দিতে। তাই প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখুন হালকা, সহজপাচ্য, পুষ্টিকর এবং শীতলকারী খাবার। আপনার শরীরই তখন বলবে, ‘গরম? কই, বুঝতেই পারছি না!’