গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত নতুন প্রস্তাব ইসরায়েলের

পর্যালোচনা করছে হামাস, শিগগিরই প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: ১:০৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৬, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট:

 

দুই মধ্যস্থতাকারী দেশ মিশর ও কাতারের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের গাজায় উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি-সংক্রান্ত নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল। মিশরের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল আল কাহেরা নিউজ টিভি সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এ তথ্য। খবর রয়টার্স, আলজাজিরা ।

গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের কাছে ইতিমধ্যে প্রস্তাবনা পৌঁছেছে। গোষ্ঠীটির মুখপাত্র আবু জুহরি জানিয়েছেন, তারা প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করছেন এবং ‘যত শিগগিরই সম্ভব’ এ ইস্যুতে নিজেদের সম্ভাবনা জানাবেন গোষ্ঠীর হাইকমান্ড। তবে সেই প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে, তা পুরোপুরি অনিশ্চিত। কারণ প্রস্তাবনায় এই প্রথমবারের মতো ইসরায়েল হামাসকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের দাবি জানিয়েছে। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামাস যদি নিজেদের নিরস্ত্র করতে সম্মত হয়, তাহলেই গাজায় যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে গোষ্ঠীটির সঙ্গে পরবর্তী আলোচনার সেশন শুরু করবে ইসরায়েল।

হামাস এই শর্ত মানবে কি না এখনো তা অনিশ্চিত। এ ইস্যুতে আবু জুহরি বলেন, ‘হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ইস্যুটির সঙ্গে অন্তত ১০ লাখ রেডলাইন যুক্ত। নতুন প্রস্তাব নিয়ে গোষ্ঠীর হাইকমান্ড আলোচনায় বসবেন। দেখা যাক কী সিদ্ধান্ত নেন তারা।’ তিনি আরো বলেছেন, যে হামাস যত শিগগির সম্ভব এ ইস্যুতে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানাবে।

এর আগে গাজায় যুদ্ধবিরতি-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব দিয়েছিল হামাস। সেখানে গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ইসরায়েল যদি গাজা থেকে সব সেনা সরিয়ে নিতে সম্মত হয়, তাহলে হামাসও গাজায় বন্দি সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করে দেবে। তবে নিরাপত্তার অজুহাতে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারে রাজি হয়নি ইসরায়েল। ফলে জিম্মিরাও মুক্তি পায়নি। তবে এবার হামাস শিগগিরই প্রতিক্রিয়া জানাবে বলে আশা করছেন মধ্যস্থতাকারীরা। মিশরের এক সরকারি কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘হামাস এখন খুব ভালো করেই জানে যে সময় কত মূল্যবান এবং আমার বিশ্বাস, তারা শিগগিরই এ প্রস্তাবে সাড়া দেবে।’

২০২৩ সালে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৪২ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা। আকস্মিক এই হামলার পর ঐদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। টানা ১৫ মাস অভিযান চালানোর পর গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তবে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার ও জিম্মিদের মুক্তি ইস্যুতে হামাসের সঙ্গে মতানৈক্য হওয়ায় গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন ৫১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এই নিহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছে আরো ১ লাখ ১৬ হাজার ৩৪৩ জন।

ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের জন্য আর্থিক সহায়তা বাড়াচ্ছে ইইউ: ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) জন্য আর্থিক সহায়তা বাড়াবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। আগামী তিন বছর মেয়াদে এই সহায়তার পরিমাণ হবে প্রায় ১৬০ কোটি ইউরো (১৮০ কোটি মার্কিন ডলার)। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউরোপীয় কমিশনার দাবরাভকা সুইসা এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেন। তিনি বলেন, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অপশাসনের অভিযোগ করে আসছেন সমালোচকরা। পিএর সংস্কার এবং আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি যুগপৎভাবে চলমান থাকবে।

দাবরাভকা বলেন, ‘আমরা চাই পিএ নিজেদের সংস্কার করুক। নাহলে তারা যথেষ্ট শক্তিশালী হবে না এবং সংলাপে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাও তৈরি হবে না। কেবল আমাদের জন্য নয়, ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনায় যাওয়ার জন্যও তাদের পর্যাপ্ত বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে তোলা প্রয়োজন।’ সোমবার লুক্সেমবার্গে ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তফা ও অন্যান্য কর্মকর্তার উচ্চ পর্যায়ের এক রাজনৈতিক সংলাপের আগে এই মন্তব্য করেছেন সুইসা।

ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে বড় দাতা ইইউ। এই জোটের কর্মকর্তারা আশা করছেন, গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটলে সেখানকার দায়িত্বও একসময় পিএ নেবে। বর্তমানে পিএ পশ্চিম তীরের শাসন পরিচালনা করছে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার বলে আসছেন, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) হাতে গাজা ছেড়ে দেওয়া হবে না। তাছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যে ইইউর দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের লক্ষ্যও পরিহার করে আসছে ইসরায়েল। এই দ্বিরাষ্ট্র সমাধানে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা আছে।

গাজায় যু’দ্ধবিরতি সংক্রান্ত নতুন প্রস্তাব ইসরায়েলের