গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। এই ফলাফল মেনে নিয়ে বিজয়ীকে অভিনন্দন জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার (২৬ মে) বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে দলের এই প্রতিক্রিয়ার কথা জানান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হলে দেশের মানুষ যতটা খুশি হতেন, তার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন হওয়ায়। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই, জনগণকে ধন্যবাদ জানাই এবং বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানাই।
এই নির্বাচনে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি এতদিন মিথ্যাচার করে আসছে— এই সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়, সেটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। শেখ হাসিনা ওয়াদা পূরণ করেছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী হারবে কিনা তার চেয়ে বড় কথা হলো গণতন্ত্র জয়লাভ করেছে।’
গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রংপুরের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘আগামী চারটি সিটি নির্বাচন ও এগুলোর মতো জাতীয় নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে।’
গাজীপুরে নৌকার প্রর্থীর পক্ষে নির্বাচনি কাজ করতে আওয়ামী লীগের ২৮ সদস্যদের কেন্দ্রীয় টিমের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন মির্জা আজম। সমাবেশে তিনি বলেন, ‘গাজীপুর সিটি নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে। তাতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। আমরা সেই পরাজয় মেনে নিয়ে বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়েছি।’
২৫ মে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ৪৮০ কেন্দ্রের মধ্যে ৪৮০টির বেসরকারি ফল ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন টেবিলঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন দুই লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটে আজমত উল্লাকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর আজমত উল্লা খানের পরাজয় নিয়ে আওয়ামী লীগ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। গত ২৪ এপ্রিল গঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এই টিমে প্রধান দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর মোবাইল বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। টিমের অন্য সদস্যরা এ নিয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি এই সিটির সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। জাহাঙ্গীর তার মা জায়েদা খাতুনকেও মেয়র প্রার্থী করেন। পরে নিজের প্রার্থিতা বাতিল হলে মায়ের জন্য ভোটের মাঠে নামেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার টিকিট পাওয়া আজমত উল্লা খান গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠন হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনে (২০১৩ সাল) আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আলোচনায় আসেন জাহাঙ্গীর আলম। তখন নির্বাচনে জয়লাভ করেন বিএনপির (প্রয়াত) নেতা এম এ মান্নান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকার টিকিট নিয়ে মেয়র হলেও দল থেকে বহিষ্কৃত এবং মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হন জাহাঙ্গীর আলম। পরে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলেও মেয়র আর ফিরে পাননি তিনি।