গোপালগঞ্জে খালিদের মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন সহপাঠীরা
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
আশি ও নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী, ‘চাইম’ ব্যান্ডের ভোকালিস্ট খালিদ সাইফুল্লাহর মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন সহপাঠীরা। এ সময় করলেন শৈশবের স্মৃতিচারণা।
গোপালগঞ্জ শহরের চৌরঙ্গীর কলেজ রোডের ইসহাক কমপ্লেক্সে জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী খালিদ সাইফুল্লাহর বাড়িতে স্বজন, সহপাঠী, ভক্তরা ভিড় করেন। শেষ দেখা দেখতে ছুটে এসেছেন দূরদূরান্ত থেকে।
গোপালগঞ্জের চন্দ্রিমা শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ তাঁর স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘১৯৭৪ সালে যখন খালিদ এস এম মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের পড়ালেখা করেন, তখন থেকেই ওর গানের সঙ্গে আমি তবলা বাজাইতাম। ও খুব মিশুক ও আনন্দপ্রিয় লোক ছিল। যেকোনো লোকের সঙ্গে সহজে মিশে যেত।’ তিনি আরও বলেন, ‘শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে অগ্নিবীণা শিল্প গোষ্ঠী নামের একটা সংগঠন ছিল, খালিদ ছিল সেখানের শিশুশিল্পী। ছোটবেলা থেকে খালিদের সংগীতের প্রতি অগাদ ভালোবাসা ছিল। একসময় সে নামকরা শিল্প হয়ে উঠল। আজ আমরা তাকে হারালাম।’
গোপালগঞ্জের মাঝিগাতী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খালিদ সাইফুল্লাহ সম্পর্কে বলেন, ‘আমি একসময়ে ফরিদপুরের ঠিকাদারি করতাম। একদিন ফরিদপুরে বড় কনসার্ট হচ্ছিল। খালিদ তখন অল্প বয়সী শিল্পী। ওই দিন খালিদ তিন তিনটি পুরস্কার পেল। সেদিন আমার গর্বে বুকটা ভরে উঠল। আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম, তাকে নিয়ে মিষ্টি খাওয়ালাম।’ বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
একের পর এক হিট গান উপহার দিয়ে অল্প সময়েই খ্যাতি পান খালিদ, তাঁর গান এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে
একের পর এক হিট গান উপহার দিয়ে অল্প সময়েই খ্যাতি পান খালিদ, তাঁর গান এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরেকোলাজ
খালিদ সাইফুল্লার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আজ বাদ জোহর গোপালগঞ্জ কোট মসজিদে জানাজা শেষে গেটপাড়া পৌর কবরস্থানে বাবা-মায়ের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হবে। এর আগে গতকাল রাত তিনটায় ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জের শহরের ইসহাক কমপ্লেক্সে তাঁর মরদহ আনা হয়। রাত থেকেই বাড়িতে স্বজন, বন্ধু–বান্ধব ও সহপাঠীরা ভিড় করতে থাকেন।
‘সরলতার প্রতিমা’, ‘যতটা মেঘ হলে বৃষ্টি নামে’, ‘কোনো কারণেই ফেরানো গেল না তাকে’, ‘যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে’, ‘হয়নি যাবারও বেলা’র মতো অসংখ্য জনপ্রিয় গানের এই শিল্পী গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কয়েক বছর ধরেই হৃদ্রোগে ভুগছিলেন খালিদ সাইফুল্লাহ, একাধিকবার হৃদ্রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। তাঁর হৃদ্যন্ত্রে একটি স্টেন্ট বসানো ছিল।
১৯৬৩ সালে গোপালগঞ্জ সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া গুণী ওই শিল্পী তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে ছিলেন সবার ছোট। খালিদ সাইফুল্লাহ ১৯৭৯ সালে গোপালগঞ্জ এস এম মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে ১৯৮১ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শেষ করেন। গোপালগঞ্জে জন্ম নেওয়া এই শিল্পী ১৯৮১ সাল থেকে গানের জগতে যাত্রা করেন। ১৯৮৩ সালে ‘চাইম’ ব্যান্ডে যোগ দেন। একের পর এক হিট গান উপহার দিয়ে অল্প সময়েই খ্যাতি পান খালিদ, তাঁর গান এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে।