সাজ্জাদ হোসেনঃ
বিসিএস নামক সোনার হরিণকে সবাই পেতে চায়। কিন্তু কয়জনই তা পায়। সেই সোনার হরিণকেই জয় করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবির) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১২-১৩ সেশনের শিক্ষার্থী নাসিম আহমেদ। তিনি ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামে নাসিমের বাড়ি। তিনি তার গ্রামের প্রথম বিসিএস ক্যাডার। বর্তমানে তিনি একটি ব্যাংকে কর্মরত আছেন।
নাসিম আহমেদ ছাতিয়ান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে জিপিএ ৫ এবং পোড়াদহ ডিগ্রি কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে জিপিএ ৫.০০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ২০১৩ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ থেকে বিবিএ ২০তম ব্যাচ এ ভর্তি হয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
নিজের সাফল্যের অনুভূতি জানিয়ে নাসিম আহমেদ বলেন, রেজাল্ট প্রকাশ এর পরে প্রথম কয়েক মিনিট চুপচাপ বসেছিলাম রেজাল্ট দেখিনি পরে বড় ভাই রোল নিয়ে দেখে বলল, শিক্ষাতে আসছে তারপর নিজে দেখলাম অনেকটা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল। বাসায় ফোন দিয়ে বলার পরে সবাই খুশিতে কান্না করে দিয়েছে। ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অনুভূতিটি বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আমার সাফল্যের পেছনে বাবা-মা, সহধর্মিণী, বড় ভাই, শিক্ষক, কলিগ, পরিচিত অনেক বড় ভাই, ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের অনেক অবদান আছে।
প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রস্তুতির শুরুটা ভালো ছিল না মোটেও। কিছুই জানতাম না বুঝিও না কিভাবে শুরু করবো। কোন বই কিনব তা বুঝতাম না পরবর্তী সময়ে প্রতি শুক্রবার নীলক্ষেত বইয়ের মার্কেটে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম কোন বই সবাই বেশি কিনছে আমিও সেটা নিতাম। কারণ আমি মনে করি নিজের সমস্যার সমাধান যদি নিজেই বের করা যায় তাহলে সেটা দীর্ঘমেয়াদী ফল দেয়। সেই সঙ্গে বড় ভাইদের সাজেশন নিয়েছি প্রয়োজনমতো। অনুপ্রেরণা বলতে আমার আব্বু-আম্মু। আমার গ্রামে কোনো বিসিএস ক্যাডার ছিল না তাই তাদের খুব ইচ্ছা ছিল আমি যেন হই। অবশেষে আমার গ্রামের আমি প্রথম বিসিএস ক্যাডার হতে পেরেছি।
দৈনিক ৮ ঘণ্টা করে পড়েছেন নাসিম। তিনি বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে আবার ঢাকা এসে পড়াশোনা শুরু করি ৪১তম বিসিএস দেই তবে ইতিবাচক ফলাফল আসেনি। তখন দুইটা টিউশনি করাতাম। পরিবারের বোঝা না হয়ে থেকে নিজের খরচটা নিজে ব্যবস্থা করার চেষ্টা করতাম। আমার একটা রুটিন ছিল প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে পড়ার। যত কিছুই হোক ৮ ঘণ্টা পড়া কখনো মিস করিনি। রাত পার হলেও শেষ করে তারপর ঘুমাতে গেছি। আমি ক্লাস নাইন থেকে রেকর্ডের জন্য একটি ডায়েরি মেইনটেইন করি। যেখানে আমি লিখে রাখতাম কোন সাবজেক্ট কয় মিনিট পড়তাম। আমি মনে করি একবারে কোনো কিছু মুখস্ত করার থেকে যদি গল্পের মতো করে একি জিনিস ৫০ বার পড়ি তাহলে সেটা মনে থেকে যায়। আমি মনে করি একি বিষয় বারবার পড়ার কারণে আমি চাকরির পরীক্ষায় বিশেষ সাফল্য পেয়েছি। সঙ্গে নোট করে পড়ার বিষয়টা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। কোনো বিষয়ে আপডেট কিছু পেলে বইয়ের সংশ্লিষ্ট পাতায় মার্ক করে সেটা লিখে রাখতাম। এর সঙ্গে প্রতিদিন পত্রিকা পড়ে নোট করার চেষ্টা করতাম যা আমাকে অনেক বেশি সাহায্য করেছে।
পরিবার সম্পর্কে তিনি বলেন, পরিবার সম্পর্কে বলতে গেলে একেবারেই নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা একজন মানুষ আমি। আর্থিক অবস্থা কখনোই ভালো ছিল না। তবে বাবা-মার সাহস ছিল অপরিসীম। তারা কখনো মনোবল হারায়নি। সবসময় সাহস দিয়েছে যে আমরা আছি তোমার যেটা ভালো লাগবে তাই করবা। এককথায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমার স্বাধীনতা ছিল। আমি আব্বু-আম্মু, ভাই ছাড়াও আমার সহধর্মিণী আমাকে সবসময় সাহস দিয়ে আমার পাশে থেকেছে।
ক্যাডার চয়েসের বিষয়ে তিনি বলেন, ক্যাডার চয়েস একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এক্ষেত্রে আমি আমার পছন্দের ক্যাডারগুলো এবং আমার একাডেমিক বিষয়গুলোর সংমিশ্রণ করে চয়েস দিয়েছি। ক্যাডার চয়েসের ক্ষেত্রে আমি মনে করি যেসব ক্ষেত্রে আপনি কমফোর্ট মনে করবেন এবং আনন্দের সঙ্গে করতে পারবেন তুলবে সেগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
যারা বিসিএস দিতে চান তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা আগামীতে বিসিএস দিতে চান তাদের জন্য আমার পরামর্শ থাকবে পরিশ্রমী এবং অসম্ভব ধৈর্যশীল হতে হবে। সৃষ্টিকর্তার ওপর ও নিজের ওপর বিশ্বাস থাকতে হবে যে আমি পারব।
নাসিমের বাবা হারুন অর রশীদ বলেন, ছেলের সফলতায় আমরা সবাই খুব খুশি। গ্রামের প্রথম বিসিএস ক্যাডার হওয়ায় গ্রামের সবাই তার প্রশংসা করছেন। বলছে আপানর ছেলে গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করেছে। বাবা হিসেবে এর থেকে প্রাপ্তি আর কী হতে পারে?
ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিসিএস এ সাফল্য পাওয়ায় তাকে অভিনন্দন। তবে ব্যবসায় অনুষদের শিক্ষার্থীদের উচিত ব্যবসা সংক্রান্ত সেক্টরগুলোতে লিড করা। তাহলে তারা পড়াশোনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এ সেক্টরেও সাফল্যের দ্বার উন্মোচিত করতে পারবে