চট্টগ্রামে পুরোনো সিন্ডিকেটে চড়ছে আলুর দাম

প্রকাশিত: ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০২৪

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

চট্টগ্রামেও অস্থির আলুর বাজার। দু’দিন ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা। বৃহস্পতিবার চলতি বছরে রেকর্ড ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে আলু। অসাধু ব্যবসায়ীদের লোভের বলি হচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। অস্থিরতার পেছনে পুরোনো সিন্ডিকেটের হাত দেখছে প্রশাসন। সরবরাহ সংকটকে পুঁজি করে নয়ছয় করছেন চট্টগ্রামের বৃহৎ তিন পাইকারি বাজার– খাতুনগঞ্জ, রিয়াজউদ্দিন ও পাহাড়তলীর আড়তদাররা। মধ্যস্বত্বভোগী ও আলু সরবরাহের প্রধান উৎস মুন্সীগঞ্জ এবং জয়পুরহাটের ব্যবসায়ীদেরও ইন্ধন রয়েছে।

জানা যায়, পুরোনো সিন্ডিকেটে রয়েছে চট্টগ্রামের আলুর বড় আড়তদার আব্দুল বারেক ট্রেডার্স, মেসার্স লাকী স্টোর, বারো আউলিয়া বাণিজ্যালয়, ফেনী বাণিজ্যালয়, মোহরা বাণিজ্যালয়, এসএম ট্রেডার্স, কুমিল্লা ট্রেডার্স, রফ বাণিজ্যালয়, মক্কা বাণিজ্যালয়, মামুন ট্রেডার্স, মা বিতান, কুসুমপুরা বাণিজ্যালয়, জননী ট্রেডার্স, দাউদকান্দি বাণিজ্যালয়, রাজমহল বাণিজ্যালয়, কুসুমপুরা ট্রেডার্স, শাহ আমানত ও ইউসুফ ট্রেডার্স।
এসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আগেও একাধিকবার কারসাজি করে আলুর দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটেছেন বলে প্রমাণ পেয়েছে প্রশাসন। কৃত্রিম সংকট দেখাতে তারা গুদামে মজুত থাকার পরও বাজারে পর্যাপ্ত আলু সরবরাহ করে না। প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত আলুবোঝাই একের পর এক ট্রাক চট্টগ্রামের প্রধান তিন বাজারে ঢুকলেও নেই কারও কাছে রসিদ। ফোনে ফোনেই বাড়তি দাম নির্ধারণ করা হয়। তার ওপর আরও কিছু যোগ করেন বড় পাইকাররা।
এভাবে কয়েক হাত বদল হয়ে মানভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় কেনা আলু চট্টগ্রামের বাজারে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ৭০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। মুন্সীগঞ্জ ও জয়পুরহাটের বড় ব্যবসায়ীদের পকেটে যায় বড় অংশ। বাকি টাকা চট্টগ্রামের আড়তদার ও মধ্যস্বত্বভোগীরা পকেটে ভরেন।
চট্টগ্রামে বাজার নিয়ন্ত্রণে গঠিত বিশেষ টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেন, ‘কেজিতে আলুর দাম ১৫ টাকা বেড়ে যাওয়া কারসাজি ছাড়া কিছুই নয়। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার পরও এমন দাম অস্বাভাবিক। এর পেছনে বড় আড়তদাররা জড়িত। তাদের নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে।’
বৃহস্পতিবার সরেজমিন নগরের কাজীর দেউড়ি, বহদ্দারহাট, চকবাজার, দেওয়ানবাজার, কর্ণফুলী বাজার, বক্সির হাটসহ কয়েকটি বাজারে আলু বিক্রি হয় ৭০ টাকা কেজি। অথচ তিন দিন আগেও মানভেদে ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, আলুর বাজারে অস্থিরতা দেখা দিলেই, চট্টগ্রামের প্রধান তিন বাজারের আড়তদারের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলে। প্রশাসনও তাদের কাছে জিম্মি।
ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, নতুন সরকার দেশ চালালেও, বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে পুরোনো সিন্ডিকেট। চট্টগ্রামের বৃহৎ তিন বাজারের এমন অনেকের বিরুদ্ধে আগেও একাধিকবার কারসাজির প্রমাণ পেয়ে নামমাত্র জরিমানা করে দায়িত্ব সারে প্রশাসন। এ জন্য আবারও তারা ভোক্তার পকেট কাটার সাহস দেখিয়েছেন।