চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় বৃদ্ধকে হত্যার চেষ্টা ও জমি দখলের অভিযোগ

নিজেস্ব প্রতিবেদক:
চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে এক বৃদ্ধকে হত্যার চেষ্টা ও তার জমি দখল করার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (৭ এপ্রিল) উপজেলার কালাপানিয়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আহম্মদ সোবাহানের মেয়ে রীনা বেগম গত ১০ এপ্রিল বাদি হয়ে চার জনকে আসামি করে সন্দ্বীপ থানায় মামলা ও নৌ-বাহিনীর স্থানীয় কন্টিনজেন্ট কমান্ডারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযুক্তরা হলেন, মোহাম্মদ মনির (৩৫) প্রকাশ ভানু মনির, ইউসুফ (৫৫), গোলাম মাওলা (৫৫), স্বপ্না বেগম (৪৫)।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী- রীনা বেগম (৩৫), স্বামী-মোঃ নাছির উদ্দীন, পিতা-আহম্মদ সোবান, সাং-কালাপানিয়া, ওয়ার্ড নং-০৩ (আবু ভূইয়ার বাড়ী), এ/পি-বাউরিয়া, ওয়ার্ড নং-০৫ (মাইনজার বাড়ী), থানা-সন্দ্বীপ, জেলা-চট্টগ্রাম থানায় হাজির হইয়া এই মর্মে এজাহার দায়ের করিতেছি যে, আমি একজন গৃহিনী। স্বামীর বাড়িতে থাকিয়া স্বামীর সংসার করিয়া আসিতেছি। আমার আপন ভাই ০৫(পাঁচ) ভাই সবাই কর্মের তাগিদে বিদেশ থাকে। আমার পিতার বাড়ীতে আমার বৃদ্ধ পিতা-মাতা, ভাবী ও ভাইয়ের ছোট ছোট সন্তানেরা বসবাস করে। জায়গা জমি সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়া বিবাদী গোলাম মাওলার সহিত আমার পিতার বিরোধসহ মনোমালিণ্যতা চলিয়া আসিতেছিল। উক্ত গোলাম মাওলা একজন প্রবাসী। বিবাদী স্বপ্না বেগম বিবাদী গোলাম মাওলার স্ত্রী হয়। বিবাদী মোহাম্মদ মনির ও ইউসুফদ্বয় বিবাদী গোলাম মাওলার স্ত্রী বিবাদী স্বপ্না বেগমের সহযোগী। বিবাদী গোলাম মাওলা প্রবাসে থাকিয়া তাহার স্ত্রী বিবাদী স্বপ্না বেগমের মাধ্যমে বিবাদী মোহাম্মদ মনির ও ইউসুফদ্বয়ের মাধ্যমে আমার বৃদ্ধ পিতাকে হুমকি দামকী প্রদর্শন করানোসহ আমাদের বাড়ীর কিছু জায়গা জবর দখল করিয়া ফেলে। ঘটনার দিন ইং ০৭/০৪/২০২৫ খ্রিঃ তারিখ বিকাল অনুমান ০৫.১৫ ঘটিকার সময় আমার বৃদ্ধ পিতা আহম্মদ সুবহান নিজ বাড়ি হইতে দোকানে যাওয়ার পথে কালাপানিয়া সাকিনে ০৩ নং ওয়ার্ডস্থ আবু ভূইয়ার বাড়ীর সামনের দোকানের সামনে রাস্তায় গেলে বিবাদী মোহাম্মদ মনির ও ইউসুফদ্বয় আমার পিতার পথরোধ করিয়া বিবাদী মনির আমার পিতাকে বলে যে, “তুই আমাকে কালকের মধ্যে ১,০০,০০০/ (এক লক্ষ) টাকা চাঁদা দিবি। আমার পিতা চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করিলে বিবাদীদ্বয় হত্যার উদ্দেশ্যে আমার পিতাকে মারপিট শুরু করে। বিবাদী মোহাম্মদ মনির হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠি দিয়া আমার পিতার মাথা লক্ষ্য করিয়া বারি মারিলে প্রান রক্ষার্থে আমার পিতার একটু সড়িয়া দাড়াইলে উক্ত বারি আমার পিতার নাকের উপর লাগিয়া নাকের হাড় ভাঙ্গিয়া গুরুতর রক্তাক্ত হাড়ভাঙ্গা জখম করে। বিবাদী ইউসুফ লাঠি দিয়া -এলোপাতারী বাইরাইয়া আমার পিতার দু পায়েসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে রক্তাক্ত ও লীলাফুলা জখম করে। আমার পিতা মাটিতে পড়িয়া গেলে বিবাদী মোহাম্মদ মনির তাহার দু হাত দিয়া আমার পিতার গলায় চাপ দিয়া ধরিয়া শ্বাসরুদ্ধ করিয়া হত্যার চেষ্টা করে ও আসামী মনির আমার পিতার পরিহিত পাঞ্জাবীর ডান পকেট হইতে নগদ ৫০,০০০/ ( পঞ্চাশ হাজার) টাকা নিয়া নেয়। ইতিমধ্যে আশপাশের লোকজন ঘটনা দেখিতে পাইয়া খুন-খুন বলিয়া ডাকচিৎকার করিলে বিবাদীদ্বয় আমার পিতাকে প্রাণে হত্যার হুমকি দিয়া ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। আমি সদাই ক্রয় করার জন্য দোকানে যাওয়ার পথে ঘটনা দেখিতে পাইয়া ০৩ নং সাক্ষী জাকের হোসেনের সহায়তায় আমার পিতাকে গাছুয়া সরকারী হাসপাতালে নিয়া ভর্তি করাইয়া চিকিৎসা করাই। ঘটনার বিষয়ে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহিত পরামর্শ করিয়া থানায় আসিয়া এজাহার দায়ের করিতে বিলম্ব হইল। চিকিৎসাপত্র অত্রসাথে সংযুক্ত করিয়া দিলাম ।
মামলার বাদি রীনা বেগম জানান, তার স্বামী নাছির উদ্দীন বিদেশ থাকেন। এই সুযোগে মোহাম্মদ মনির ও ইউসুফরা আমাদের বাড়ির কিছু জায়গা দখল করে নেন। বিষয়টি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলছিল। আমার পিতা আহম্মদ সোবাহান বাড়ি থেকে দোকানে যাওয়ার পথে মনির ও ইউসুফ তার পথরোধ করে একদিনের মধ্যে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এতে রাজি না হওয়ায় তারা আমার পিতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বেদম মারপিট করে। আঘাতের কারণে তার দুই পা ও নাকসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে রক্তাক্ত হয়। চিৎকারে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তারা পালিয়ে যায়। পরে উপস্থিত লোকজন তাকে গাছুয়ায় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সূত্র: নয়া দিগন্ত