চাঁদের বুকেও বিটিএসের গান

প্রকাশিত: ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৭, ২০২৪

তথ্যপ্রযুক্তি ডেক্স:

সারা দুনিয়ার কোণে কোণে কোরিয়ান পপ বা কে–পপের জনপ্রিয়তা বেশ কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে। সেই সুবাদে দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যান্ড সংগীত দল বিটিএস তুমুল জনপ্রিয় পৃথিবীজুড়েই। এবার কে-পপের ভক্ত বা বিটিএস আর্মিরা চন্দ্রপৃষ্ঠেও তাঁদের তারকাদের দেখতে পাবেন বলে মনে হয়। কোরীয় চন্দ্র অভিযানের খবর তেমন প্রচারিত না হলেও চাঁদের অন্ধকার স্থানের নানা ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। চাঁদে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম ভ্রমণ এরই মধ্যে সাফল্য অর্জন করেছে বলে জ্যোতির্বিদেরা বলছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার চন্দ্র অভিযান দানুরি নামে পরিচিত। ২০২২ সালের আগস্টে চন্দ্রযান উৎক্ষেপণ করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম চন্দ্র অভিযানের নানা তথ্য আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। কোরিয়া পাথফাইন্ডার লুনার অরবিটার নামে পরিচিত এই অভিযানের ডাকনাম দেওয়া হয়েছে ‘দানুরি’। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে চাঁদের কক্ষপথে কাজ শুরু করে খেয়াযানটি।দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়া অ্যারোস্পেস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ইউনহেউক কিম বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি অর্জন আছে এই অভিযানে। দানুরি হলো প্রথম দক্ষিণ কোরিয়ার মহাকাশযান, যা পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে চাঁদকে পরিভ্রমণ করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার মহাকাশচারীদের আগামী কয়েক দশকে চন্দ্রপৃষ্ঠে যাওয়ার পথ খুঁজতেই পরিচালনা করা হচ্ছে এই অভিযান। দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা ও অন্যান্য মহাকাশ সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন। শুধু নভোযাত্রীদের পথ দেখানো নয়, অরবিটারটি চন্দ্রের বরফ, ইউরেনিয়াম, হিলিয়াম, সিলিকন ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর জরিপ করবে। ভবিষ্যতে চন্দ্রে অবতরণ স্থান নির্বাচন করতে সাহায্য করার জন্য একটি টপোগ্রাফিক মানচিত্র তৈরি করার কাজ করছে।’

দানুরিতে আছে গ্যামা রশ্মির স্পেকট্রোমিটার। তার ফলাফল সম্প্রতি প্রকাশ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। এই যন্ত্র চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে আসা উচ্চ শক্তির ত্বড়িৎ–চৌম্বকীয় (ইলেকট্রোম্যাগনেটিক) বিকিরণ পরিমাপ করে। খনিজ পদার্থের রাসায়নিক মানচিত্র তৈরিতে কাজ করবে যানটি। চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় যানটি মহাকাশের অন্য কোথাও থেকে আসা গামা রশ্মিও শনাক্ত করেছে।দক্ষিণ কোরিয়ার ডেজিয়নের কোরিয়া ইনস্টিটিউট অব জিওসায়েন্স অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেসের গ্রহবিজ্ঞানী কিয়ং জা কিম বলেন, যন্ত্রটি গামা রশ্মি শনাক্ত করেছে। গামা রশ্মির উজ্জ্বলতম বিস্ফোরণের খোঁজ দিয়েছে অরবিটারটি। ১৯০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের একটি গ্যালাক্সির গামা বিস্ফোরণের খোঁজ দিয়েছে। দানুরি দূরবর্তী তারা থেকে আসা আরও কয়েক ডজন গাম রশ্মির বিস্ফোরণও পরিমাপ করেছে। সূর্য–ঝড়ের কারণে সৃষ্ট বিকিরণের তথ্যও সংগ্রহ করেছে।

দানুরিতে নাসার একটি ক্যামেরা আছে। সেই ক্যামেরা চাঁদের মেরুর কাছাকাছি খাদের ছবি সংগ্রহ করছে। এসব খাদে সূর্যের রশ্মি পৌঁছাতে পারে না। ক্যামেরাটির নাম শ্যাডোক্যাম। এটি চন্দ্রপৃষ্ঠের কম আলোকিত স্থান থেকে ছবি তুলতে পারে। চাঁদের বিষুবরেখার কাছাকাছি কিছু খাদের ছবি পাঠিয়েছে অরবিটারটি।

দানুরি চাঁদের দূরবর্তী চৌম্বকক্ষেত্র সম্পর্কেও তথ্য দিচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার কিয়ং হি ইউনিভার্সিটির গ্রহবিজ্ঞানী উউইন জো বলেন, নাসার দুটি ছোট যানের সঙ্গে দানুরি কাজ করছে। প্রথমবারের মতো এমন যৌথভাবে কাজ করা হচ্ছে। দানুরি চাঁদের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সান্তা ক্রুজের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহবিজ্ঞানী ইয়ান গ্যারিক-বেথেল বলেন, নতুন তথ্য অনুসারে চাঁদের দূরবর্তী দিকটি কাছের দিকের চেয়ে বেশি বৈদ্যুতিকভাবে পরিবাহী বলে মনে হচ্ছে। চাঁদের দূরবর্তী দিকটি বেশি উত্তপ্ত হতে পারে। চন্দ্রপৃষ্ঠের নিচে পানি থাকার সম্ভাবনা বেশি। দানুরির তথ্য বলছে চাঁদের দুই পাশ দুই রকমের।বিজ্ঞানীরা বর্তমানে এমন বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে পারছেন না। দানুরিতে ফ্ল্যাগশিপ যন্ত্রের মধ্যে দুটি ক্যামেরা উল্লেখযোগ্য। এই ক্যামেরা পোলারাইজড আলোতে চন্দ্রপৃষ্ঠকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। সাধারণ আলোয় দেখার চেয়ে পোলারাইজড আলোয় বেশি তথ্য জানার সুযোগ আছে। মনে করা হচ্ছিল অরবিটারটি মাত্র একবছরের মতো কাজ করবে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে অরবিটারটি বেশি সময় ধরে কাজ করছে।

মহাকাশযানটি ২০২৫ সালের মার্চ মাসের সূর্যগ্রহণ কীভাবে দেখবে, তা নিয়ে ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। সূর্যগ্রহণের কারণে সূর্যের আলোহীন অবস্থায় পড়বে যানটি। দানুরির মাধ্যমে স্পেস ইন্টারনেট বিষয়ে পরীক্ষা করছে দক্ষিণ কোরিয়া। দানুরি মহাকাশ থেকে বেশ কিছু ছবি ই–মেইল করেছে পৃথিবীতে। বিটিএস ব্যান্ডের বিখ্যাত ‘ডায়নামাইট’ গানটির ভিডিও ফাইলও মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে বিটিএস–ভক্তদের চমকে দিয়েছিল দানুরি।