চাকরির প্রলোভনে ভারতে নিয়ে কিডনি বিক্রি, ক্রেতাও বাংলাদেশি
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
মোঃ সাইফুল ইসলামঃ
চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দেশের হতদরিদ্র মানুষকে ভারতে নিয়ে যায় একটি চক্র। দেশটির রাজধানী দিল্লিতে নিয়ে জিম্মি করে ফেলা হয় ভুক্তভোগীকে। পরে টাকার লোভসহ বিভিন্ন কৌশলে চাকরিপ্রত্যাশীদের কিডনি হাতিয়ে নেয় চক্রটি। এখন পর্যন্ত দেশ থেকে ১০ ব্যক্তিকে ভারতে নিয়ে তাদের কিডনি হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকার ধানমন্ডি থানায় চক্রটির বিরুদ্ধে রবিন নামে এক ভুক্তভোগী মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ১১ মে ধানমন্ডির ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে এবং বাগেরহাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তারা হলেন- মো. রাজু হাওলাদার (৩২), শাহেদ উদ্দীন (২২) ও মো. আতাহার হোসেন বাপ্পী (২৮)। এ ঘটনায় পলাতক রয়েছেন মো. মাছুম (২৭), শাহীন (৩৫) ও সাগর ওরেফ মোস্তফাসহ (৩৭) অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জন।
ধানমন্ডি থানা সূত্রে জানা যায়, চক্রটি দেশের হতদরিদ্র মানুষদের ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে নিয়ে নানা কৌশলে কিডনি হাতিয়ে নেয়। ভুক্তভোগী রবিনকে ভারতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রথমে দিল্লির ফরিদাবাদ এলাকায় নেওয়া হয়। পরে তাকে নানা কৌশলে কিডনি বিক্রির জন্য রাজি করানো হয়। চুক্তি অনুযায়ী চক্রটি তাকে ছয় লাখ টাকা দেওয়ার কথা বললেও তাকে দেয় তিন লাখ টাকা।রোববার (১২ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থিত ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন।
ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ২০২৩ সালে এপ্রিল মাসে মিরপুরে শাহ আলী মার্কেটের পেছনে চায়ের দোকানে রবিন তার এক বন্ধুর সঙ্গে চা খাচ্ছিল এবং সংসারের অভাব-অনটন নিয়ে কথাবার্তা বলছিল। এ সময় তাদের পাশে বসা ছিলেন অভিযুক্ত পলাতক আসামি মাছুমও। তিনিও চা পান করছিলেন। তাদের কথাবার্তা শুনে মাছুম নিজ থেকেই ভুক্তভোগীকে বলেন, ভারতে তার ব্যবসা আছে এবং ওই প্রতিষ্ঠানে সে রবিনকে চাকরি দিতে পারবে। একপর্যায়ে মাছুমের সঙ্গে মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান করেন রবিন। এরপর মাছুমের সঙ্গে নিয়মিত কথা হতো রবিনের। একপর্যায়ে ভারতে গিয়ে চাকরির বিষয়ে রাজি হন রবিন।
তিনি বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে ভুক্তভোগীকে নিয়ে যান মাছুম। সেখানে তার সঙ্গে গ্রেপ্তার আসামি মো. রাজু হাওলাদারের পরিচয় হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর ভারতের ভিসার জন্য ভুক্তভোগীর পাসপোর্ট নিয়ে নেয় তারা।ভিসার পাওয়ার পর ভুক্তভোগীকে মাছুম ও মো. রাজু হাওলাদার গ্রেপ্তার আসামি শাহেদ উদ্দিন (২২) ও মো. আতাহার হোসেন বাপ্পীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। তারা একে-অপরের ব্যবসায়িক পার্টনার, বাংলাদেশ ও ভারতে তারা যৌথভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে বলে ভুক্তভোগীকে জানায়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীকে ভারতের দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে রিসিভ করে পলাতক আসামি শাহীন (৩৫) ও সাগর। তারা ভুক্তভোগীকে রিসিভ করে তার পাসপোর্ট হাতিয়ে নেয়। পরে দিল্লি থেকে ভুক্তভোগীকে ফরিদাবাদ নামে একটি এলাকায় নিয়ে রাখা হয়।
তিনি আরও বলেন, একপর্যায়ে আর্থিক অনটন, সাংসারিক অর্থনৈতিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে একটি কিডনি দেওয়ার জন্য ভুক্তভোগীকে প্ররোচিত করে। একপর্যায়ে তারা ভুক্তভোগীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলে, পাসপোর্ট ছাড়া সে দেশেও ফিরে যেতে পারবে না। পরে ভুক্তভোগীকে নয়া দিল্লির এশিয়ান হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে কিডনি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করায়। এর কিছুদিন পর তাকে ভারতের গুজরাটে নিয়ে যায় এবং মুক্তিনগর এলাকায় দু’তলা বিশিষ্ট একটি বাসায় রাখা হয়। এরপর গত ৪ মার্চ ভারতের গুজরাট কিডনি অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালে অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে তার একটি কিডনি নেওয়া হয়।
অপারেশন শেষে হাসপাতাল থেকে চার দিন পর ছাড়া পান ভুক্তভোগী। এরপর আসামিরা ভারতের অজ্ঞাত স্থানে প্রায় ১০ থেকে ১১ দিন ভুক্তভোগীকে আটক রাখে। এদিকে, হাসপাতালে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন মাধ্যমে ভুক্তভোগী জানতে পারে, তার কিডনি আসামিরা দালাল চক্রের কাছে প্রায় ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে। একপর্যায়ে চক্রটি ভুক্তভোগীকে কিছু টাকা দেওয়ার কথা বলে। বাংলাদেশে অবস্থান করা চক্রের অন্য সদস্যরা ভুক্তভোগীর স্ত্রী ইশরাত জাহানের বিকাশ নম্বরে তিন লাখ টাকা দেয়।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, দরিদ্র মানুষ, যাদের আর্থিক চাহিদা রয়েছে তারাই চক্রের টার্গেট। রবিনের ক্ষেত্রে যেটি ঘটেছে, তাকে খুব সামান্য পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চক্রটি এসব কিডনি আরও চড়া দামে বিক্রি করে আসছে। চক্রটি বাংলাদেশ থেকে শুরু করে কলকাতা ও গুজরাটেও কাজ করে আসছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চক্রটি এখন পর্যন্ত ভারতে নিয়ে ১০ ব্যক্তির কিডনি হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের পাইপলাইনে আরও পাঁচ থেকে ছয়জন ছিল বলে জানতে পেরেছি।অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চক্রটি রবিনকে কিডনির বিনিময়ে ছয় লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত তিন লাখ টাকা দেয়। এসব কিডনির গ্রহীতারাও বাংলাদেশি।