চাকরি করেই দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদের মালিক হারুন

প্রকাশিত: ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৯, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

২০২৩ সালে ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা হয়েছিল। এতদিন সেই তথ্য প্রকাশ করা না হলেও প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করে দুদক। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অবৈধ উপায়ে গড়ে তোলা সম্পদের বিবরণী।
বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা সর্বশেষ ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি)। সরকারি স্কেল অনুযায়ী তৃতীয় গ্রেডের চাকরিজীবী হিসেবে সর্বসাকুল্যে বেতন ৮০ হাজার টাকারও কম। অথচ সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন হারুন।
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার ও মহানগর ডিবির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

রোববার (১৮ আগস্ট) কমিশনের এক বৈঠকে কয়েকজনের দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
দুদকের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের পরই রোববার (১৮ আগস্ট) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ও তার স্ত্রী শিরিন আক্তারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ জমা হয়েছিল ২০২৩ সালের জুলাই মাসে। নানান কারণে সেই তথ্য প্রকাশ করা না হলেও প্রাথমিকভাবে দুদক অনুসন্ধান চালিয়ে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করে। রোববার (১৮ আগস্ট) কমিশনের এক বৈঠকে হারুনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

দুদক সূত্র জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিষয়ে দুদক জানতে পারে যে তিনি ২০তম বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশ ক্যাডারের একজন সদস্য হিসেবে ২০০০ সালে চাকরিতে যোগদান করেন। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তিনি চাকরি পেয়েছেন—যা প্রকাশ্য অনুসন্ধানের সময় নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে।

এছাড়া তিনি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন এলাকায় নিরীহ লোকজনের জমি নামমাত্র মূল্যে জোর করে কিনে কয়েকশ’ কোটি টাকা খরচ করে ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’ নামে একটি বিলাসবহুল রিসোর্ট তৈরি করেছেন। গাজীপুরের শ্রীপুরের উত্তর ভগ্নাহাতি এলাকায়ও সবুজপাতা নামে একটি রিসোর্ট তৈরি করেছেন মর্মে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়।

এছাড়া, তার ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ঢাকার উত্তরায় সেক্টর ৩ ও ৫-এ একাধিক বাণিজ্যিক প্লট ও বহুতল ভবন রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর সড়কে সাড়ে সাত কাঠার এক নম্বর বাণিজ্যিক প্লটটি তার। একই সেক্টরে সাড়ে সাত কাঠা জমির ওপর ১৪ তলা আরেকটি বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। তিন নম্বর সেক্টরের তিন নম্বর রোডে ‘এন্ডোরা’ নামে একটি ছয়তলা বাড়ি রয়েছে হারুনের। ১০ নম্বর সেক্টরে একটি পাঁচ কাঠার খালি প্লট রয়েছে তার।

রিক্রুটিং ও ট্রাভেল এজেন্সিসহ নামে-বেনামে নিয়মবহির্ভূত বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গেও তিনি জড়িত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে জানা যায়, হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযোগ উঠলেও তার প্রভাবের কারণে কেউ কিছু বলতে পারেননি।

টাকা পাচারের পথ সহজ করতে হারুন অর রশীদ নিজেই চালু করেন মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান। সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও আছে তার। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সম্পত্তি দখল ও দেখাশোনার জন্য আছে তিন সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি। নামে-বেনামে রয়েছে একাধিক আবাসিক হোটেল। আরও অন্তত ১০টি কোম্পানির মালিক তিনি।

কথিত মামা জাহাঙ্গীর আলমের নামে হারুন অর রশীদ গড়েছেন এসব সম্পদ। দখল করা সম্পত্তি বিক্রি করে সেই টাকা দেশের বাইরে পাচার ও বিদেশে গড়ে তোলা সম্পদ তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব আলাদা কমিটির। অন্তত ছয়টি দেশে ব্যবসা গড়েছেন অঢেল টাকার।

সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের নিউ হাইড পার্ক এলাকায় স্ত্রীর নামে পাঁচ মিলিয়ন ডলারের একটি বাড়ি কিনেছেন হারুন। ওই সময় হারুনের স্ত্রীর বিপুল অর্থ লেনদেন শনাক্ত করে এর তদন্ত করেছিল এফবিআই।