চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি ১২০ কর্মচারীর

প্রকাশিত: ৩:৫৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৪, ২০২৪

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অধীনে এমএলএসএস পদে চাকরি পেয়ে যেন স্বপ্ন সত্যি হয়েছিল নূর হোসেনের। হাল ধরেছিলেন সংসারের। পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোই চলছিল তাঁর। কিন্তু চাকরির কয়েক মাসের মাথায় সংশ্লিষ্ট নিয়োগ কমিটির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হলে নিয়োগ বাতিল করা হয় নূর হোসেনের। একই সঙ্গে নিয়োগ বাতিল হয় তাঁর মতো ১২০ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর। গত ডিসেম্বরে নিয়োগ কমিটির ওপর করা মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে আদালতে। এতে নূর হোসেনসহ চাকরিবঞ্চিতরা আবারও আশায় বুক বেঁধেছেন। চাকরি ফিরে পেতে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন। দ্বারস্থ হয়েছেন আদালতেরও।

নূর হোসেন ধর্মপাশা উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের নওধার গ্রামের সিরাজ আলীর ছেলে। ২০১০ সালের জুলাইয়ে সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ে নিয়োগ পান তিনি। এর সাত মাস পর তাঁর নিয়োগ বাতিল করা হয়। বর্তমানে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে স্বল্প বেতনে কাজ করছেন। বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে। একই নিয়োগে ছাতক উপজেলার জাওয়া ইউনিয়নের কৈতক গ্রামের মো. নূরুজ্জামান চাকরি পেয়েছিলেন ওয়ার্ডবয় পদে। তিনি বলেন, বর্তমানে ছোটখাটো ব্যবসা করে কোনো রকমে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। চাকরি হারিয়ে তিনি কতটা অসহায় এবং দিশেহারা তা বলে বোঝাতে পারবেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ৫ অক্টোবর সুনামগঞ্জ সিভিল কার্যালয়ের অধীনে জেলার স্থায়ী বাসিন্দাদের কাছ থেকে ড্রাইভার পদে ৯ জন, এমএলএসএস পদে ৩৮ জন, ওয়ার্ডবয় পদে ১১ জন, আয়া পদে ৭ জন, নিরাপত্তা প্রহরী পদে ১০ জন, কুক মশালচি পদে ৭ জন, মালি পদে ৩ জন, সুইপার পদে ১৪ জন, ড্রাইভার পদে ১ জন, ডোম পদে ১ জনসহ বিভিন্ন পদে ১৯ জনসহ মোট ১২১ জন লোকবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।

এসব পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুনামগঞ্জের তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ হারিছ উদ্দিন আহমদ, সিলেট বিভাগের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. ইকবাল হোসেন চৌধুরী, বাংলাদেশ কর্মকমিশনের সহকারী পরিচালক মো. হালিম মিয়া এবং সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুল আলম সমন্বয়ে একটি নিয়োগ কমিটি গঠিত হয়। আগ্রহী প্রার্থীরা আবেদন করে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নিয়োগ লাভ করেন এবং ২০১০ সালের জুলাইয়ের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহে কর্মস্থলে যোগদান করেন। এরপর নির্বিঘ্নে সাত মাস চাকরি করে বেতনভাতা ভোগ করেন। কিন্তু সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ওই নিয়োগের পরপরই স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও মতিউর রহমান নিয়োগ কমিটির ওপর অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিষয়টি তদন্তের জন্য দুদককে দায়িত্ব দেয়।
এদিকে এরই মধ্যে অভিযুক্ত সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ হারিছ উদ্দিনের স্থলাভিষিক্ত হন ডা. এ. টি. এম. এ রকিব চৌধুরী। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের তিন দিন পর ২০১১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ওই ১২০ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর নিয়োগ বাতিল করেন। ২০১৭ সালে দুদক সিলেট বিভাগীয় বিশেষ জজ (জেলা ও দায়রা জজ) আদালতে এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করে। ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর মামলার চূড়ান্ত রায় দেওয়া হয়। রায়ে নিয়োগ কমিটির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলায় জড়িত সবাইকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ফলে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া সঠিক ও স্বচ্ছভাবে হয়েছে– এমনটি আদালতে প্রমাণিত হওয়ায় চাকরিবঞ্চিতরা চাকরি ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। দাবির বিষয়ে ইতোমধ্যে তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনকে বিষয়টি লিখিতভাবেও জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মো. আনিসুর রহমান বলেন, পুরো বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। এ-সংক্রান্ত কাগজপত্রও দপ্তরে নেই। খোঁজখবর নিয়ে আগামী সপ্তাহে এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদি।