
কুমিল্লা প্রতিনিধি:
ঈদ আসেনি তাদের ঘরে, প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও সুরাহা নেই
কুমিল্লার চান্দিনায় রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে গ্রামের কতিপয় মাতব্বরের রোষানলে অবরুদ্ধ দুই পরিবার। ঐ দুই পরিবারের সদস্যরা যাতে বাড়ি থেকে বের হতে না পারে সেজন্য বাড়ির চারপাশে বাঁশ ও কাঁটার বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করা হয় তাদের। টানা ১৮ দিন অবরুদ্ধ থাকায় পরিবারের সদস্যরা রোজা চলাকালীন সময় থেকে এ পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের হয়ে মসজিদে নামাজ আদায় পর্যন্তও করতে পারছে না কেউ। এমনকি ঈদের দিনও তাদেরকে বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। পুরুষরা ঈদের নামাজ আদায় করতে যেতে পারেনি ঈদগাহে। এতে ঐ দুই পরিবারের ঈদের আনন্দ স্নান হয়।
অমানবিক এ ঘটনাটি ঘটছে চান্দিনা উপজেলার মহিচাইল ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বামুটিয়া গ্রামের ভূঁইয়া বাড়িতে। গত ১৮ মার্চ থেকে ঐ বাড়ির আবুল কাশেম ভূঁইয়া ও আবুল হাসেম ভূঁইয়ার পরিবারকে এমনই নির্মমভাবে অবরুদ্ধ করে গ্রামের কতিপয় মাতব্বর। এতে নারী, পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধসহ ৭ জন এখনো অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে।
অবরুদ্ধ আবুল কাশেম ভূঁইয়া জানান, তাদের বাড়ির ঘেঁষে পশ্চিম পাশ দিয়ে একটি মাটির রাস্তার নির্মাণকাজ চলছে। আগে থেকেই এখানে পায়ে হাঁটার পথ ছিল। রাস্তা নির্মাণ হলে পরবর্তীতে এটি পাকাকরণ হবে শুনে তিনি তার বাড়ির পশ্চিম পার্শ্ব ঘেঁষে খালের কিছু অংশ ভরাট করে রাস্তাটি নির্মাণ করার জন্য স্থানীয় মেম্বার ও গ্রাম্য মাতব্বরদের অনুরোধ করেন। প্রয়োজনে তিনি মালিকানা কিছু জায়গা এবং মাটি ভরাটের জন্য ব্যয়ভার বহনের কথাও তাদের জানিয়েছেন। কিন্তু গ্রামের মাতব্বররা তার পরিপূর্ণ মালিকানা জমার জায়গা দিয়ে জোর করে রাস্তা নির্মাণ করতে চায়।
আবুল কাশেম ভূঁইয়ার ছেলে মো. ছাদেক হোসেন ভূঁইয়া জানান, মেম্বার ও গ্রাম প্রধানরা আমাদের মতামত না নিয়ে বিভিন্ন প্রকারের ৭টি গাছ কেটে ফেলেছেন। আমরা বাধা দিলে তারা বেড়া দিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে বাহির হওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। এখন আমরা কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না আবার বাহিরে থাকা কেউ বাড়িতে যেতে পারছে না। আমরা বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে আমাদের ওপর হামলা চালায় তারা। বিষয়টি আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিতভাবে জানালেও আদৌ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
ঐ গ্রামের মাতব্বর অভিযুক্ত আবু তাহের জানান, যে রাস্তাটি নির্মাণ হচ্ছে ঐ রাস্তাটির অভাবে শতাধিক পরিবারের সদস্য বাড়ি থেকে বের হওয়ার অন্য কোন সুযোগ নেই। ফসলি জমি থেকে ফসল তুলে বাড়িতে আনাও যথেষ্ট কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। সরকারি অর্থে রাস্তাটি নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় আমরা সকলেই জমার জায়গা দিয়ে রাস্তা দিয়েছি। কেউ কেউ ঘরে ভেঙেও রাস্তার জায়গা দিয়েছে। কিন্তু আবুল কাশেম ভূঁইয়া জায়গা না ছেড়ে খাল ভরাট করে রাস্তা নিতে বলেন। আমরা গ্রামবাসী অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে বাধ্য হই বেড়া দেই। তিনি যেহেতু রাস্তার জন্য জায়গা দিবেন না, সেহেতু তিনি ও তার পরিবার কারো জায়গায় পা ফেলতে পারবে না!
মহিচাইল ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সফিক সিকদার জানান, প্রায় ১৪শ ফুট রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে সকলের জায়গা দিয়ে। কিন্তু কাশেম ভূঁইয়ার মনগড়া কথায় এবং সমাজের কারো কথা না শুনায় রাস্তাটি মাত্র ৫০-৬০ ফুট কাজ বাকি আছে। যে কারণে গ্রামের মানুষ তাকে বেড়া দিয়ে আটকে রেখেছে।’ চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাজিয়া হোসেন জানান, এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে প্রধান করে ঘটনার তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।